নয়াদিল্লি ও বীরভূম: আজই শেষ। ৩৩০ কামরার এই রাষ্ট্রপতি ভবন এবার অতীত। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নয়া ঠিকানা, ১০ নম্বর রাজাজী মার্গের বাড়ি। আর এই সন্ধিক্ষণেই মন খারাপ বীরভূমে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গ্রামের বাড়ির লোকজনের! কারণ রাষ্ট্রপতির বাড়ির পুজোর তকমাটা আর থাকবে না।
পরোটা গ্রামের বাড়িতে বসে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিদির গলায় অবশ্য হতাশার কোনও সুর নেই! কারণ, তাঁর চোখে রাষ্ট্রপতি প্রণব নন, রাজনীতিবিদ প্রণবই শ্রেষ্ঠ! ভরা বর্ষায় গ্রাম বাংলার আর পাঁচটা গ্রামের মতোই ভাসছে প্রণবের শৈশবের পরোটা গ্রামও! ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি দেখে দিদির মনে পড়ে যাচ্ছে সেই ছোট্ট ভাই পল্টুর কথা, যাকে সবাই চেনে প্রণব হিসাবে!
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্ষায় আমি আর প্রণব একসঙ্গে সাঁতার কাটতাম। প্রণব গতকাল ফোন করেছিল, জিজ্ঞাসা করল কেমন আছি। রাজনীতিবিদ প্রণবই বেশি ভাল।
দুর্গা পুজোর চারটে দিন গ্রামের এই বাড়িতেই নিষ্ঠা সহকারে পুজো করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তখন তিনি অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি নন, নিখাদ ব্রাহ্মণ সন্তান।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, রাষ্ট্রপতির বাড়ির পুজো বলে প্রতিবেশীদের গর্ব আরও বেড়ে গিয়েছিল। তাই রাইসিনা থেকে তাঁর বিদায় বেলায় মন খারাপ সকলেরই।
এক প্রান্তে যখন মন খারাপের পালা অন্য প্রান্তে তখন নতুন করে সেজে ওঠা! নয়াদিল্লির ১০ নম্বর রাজাজি রোডের বাড়িই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নতুন ঠিকানা। সেখানে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ১১ হাজার ৭৬৭ বর্গফুটের রাজাজি মার্গের দোতলা বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে বিশাল বাগান ও লন। ভেতরে একটি বড় গ্রন্থাগার ও পাশেই একটি বড় পড়ার ঘর। দোতলা বাড়িতে রয়েছে লিফটও।
রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এপিজে আব্দুল কালাম আমৃত্যু এই বাড়িতে থেকেছেন। তারপর থাকতেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা। কিন্তু, তিনি বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য।
ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন ল্যান্ডসিয়ার লুটেন্স রাষ্ট্রপতি ভবনের নকশা করেছিলেন। তাঁর ছত্রে ছত্রে ছিল ইতিহাস। সেখান থেকেই এবার ১০ নম্বর রাজাজি মার্গের এই বাড়িতে প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এই বাড়িও তৈরি সেই ব্রিটিশ আমলেই। এর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। যা আরও সমৃদ্ধ হবে ৮১ বছরের বাঙালি সন্তানের গৃহপ্রবেশের মধ্যে দিয়ে।