নয়াদিল্লি: দিল্লির প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর নন, অযোধ্যার রাম মন্দির ধ্বংস করেছিলেন ষষ্ঠ সম্রাট ঔরঙ্গজেব। একটি বইয়ে এমনই দাবি করেছেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিশোর কুণাল।

১৯৭২ ব্যাচের গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস কিশোর। তিনি বিহারের বাসিন্দা। দক্ষ পুলিশ আধিকারিক, প্রশাসক হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। বিহারের ধর্মীয় ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতিও হয়েছেন কিশোর। তিনি ‘অযোধ্যা রিভিজিটেড’ নামে একটি বই লিখেছেন।

 

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জি বি পট্টনায়ক এই বইটির মুখবন্ধে লিখেছেন, লেখক অযোধ্যার ইতিহাসকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তিনি বেশ কিছু প্রমাণ পেশ করেছেন যা সাধারণ ধারণা বা বিশ্বাস এবং বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের মতের বিপরীত।

 

এই প্রথম অযোধ্যা নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়ার পণ্ডিত টমাস হারবার্ট, জোয়ানেস ডে লায়েত এবং সি মেন্টেলের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশরা আওয়াধের প্রশাসিনক ক্ষমতা দখল করার আগে পর্যন্ত অযোধ্যার অধুনা বিতর্কিত স্থানে হিন্দুরা পুজো করতেন এবং মুসলিমরা নমাজ পড়তেন। এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।

 

কিশোরের বইয়ে লেখা হয়েছে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার আগে সেখানে রাম মন্দির ছিল। ১৫২৮ সালে সেই মন্দির ধ্বংস হয়নি। ১৬৬০ সালে ফেদাই খান যখন অযোধ্যার গভর্নর ছিলেন, সেই সময়ই ভেঙে ফেলা হয় মন্দির। বাবর কখনও অযোধ্যায় যাননি। তাই তিনি রাম জন্মভূমি মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই ধারণা ভুল। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, আওয়াধের তখনকার গভর্নর মির বাকি ১৫২৮ সালে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।

 

নিজের এই দাবির স্বপক্ষে ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু দলিল-দস্তাবেজ, প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে পাওয়া প্রমাণের কথা উল্লেখ করেছেন লেখক। তাঁর মতে, বাবর থেকে শুরু করে শাহজাহান পর্যন্ত মুঘল সম্রাটরা উদার ছিলেন। তাঁরা সব ধর্মেরই সমাদর করতেন। আওয়াধের প্রথম চার জন নবাব অযোধ্যার বৈরগীদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের শাসনের সময় দেশে ধর্মান্ধতা ছেয়ে গিয়েছিল।

 

উত্তরপ্রদেশে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। তার মধ্যে এই বই নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, রাম মন্দির গড়ার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী অবশ্য বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরে অযোধ্যায় রামের জন্মস্থান নিয়ে আর কোনও বিতর্ক নেই। শুধু সংশ্লিষ্ট নিয়ে বিরোধ আছে। যা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা যায়। তবে নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে, রাম মন্দির ইস্যু সামনে চলে আসার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।