ভুবনেশ্বর: রোজভ্যালিকাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত। ধৃত তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী এদিন জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে সিবিআই কোনও নতুন তথ্যের হদিশ পায়নি। শুধু তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করেন, কী কী তথ্য মিলেছে, সব কেস ডায়েরিতে লেখা আছে। দেখে নিন। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গৌতম কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে-- সুদীপের মধ্যস্থতায় গৌতম কুণ্ডু সেন্ট জেভিয়ার্সে টাকা দিয়েছিলেন কেন? সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার ছেলে গৌতম কুণ্ডুর পিএ-র চাকরি পেল কীভাবে? সেবির নিষেধাজ্ঞার পরও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রোজভ্যালির অনুষ্ঠানে গেছিলেন কেন?
সুদীপের আইনজীবী তখন বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে কোনও অনুষ্ঠানে যেতেই পারেন। সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, যে কোনও অনুষ্ঠান আর বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সম্মেলন এক নয়। রোজভ্যালির এজেন্ট সম্মেলনে গিয়ে তাদের উৎসাহিত করাও কি জনপ্রতিনিধির কাজ?
এরপর সুদীপের আইনজীবী দাবি করেন, সেবি রোজভ্যালিকে টাকা তোলা বন্ধ করতে বলে ২০১৪ সালে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এজেন্ট সম্মেলনে গিয়েছিলেন তার আগে। যদিও, সিবিআইয়ের আইনজীবী নথি পেশ করে দাবি করেন, সেবি রোজভ্যালিকে টাকা তোলা বন্ধের নির্দেশ দেয় ২০১১ সালে।
এরপর সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ ভ্রমণের জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে যে নথি পেশ করা হয়েছে, তা জাল। আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি জামিন পেলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন।
শুনানি শেষে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলতে চান। বিচারক অনুমতি দিলে তিনি এগিয়ে এসে দাবি করেন, আমি সৎ রাজনীতিক। যতদূর মনে আছে, একবার রোজভ্যালির অনুষ্ঠানে গেছি। কিন্তু, জানতাম না সেটা এজেন্ট সম্মেলন। গৌতম কুণ্ডু সেখানে ছিলেন না। আমি এজেন্টদের টাকা তুলতে বলছি, এরকম ভিডিও থাকলে সিবিআই দেখাক।
এরকম হাজার হাজার গৌতম কুণ্ডু আছে। ব্যবসায়ী হিসেবেই তাদের চিনি। সিবিআই ছোট ইস্যুকে বড় করছে। নোট বাতিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছি বলে আমাকে শিকার বানানো হচ্ছে।
এদিন আদালতের বাইরেও সুদীপের গলায় একই সুর শোনা যায়। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক নিজে দীর্ঘক্ষণ কেস ডায়েরি খুঁটিয়ে দেখে সুদীপকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।