বেঙ্গালুরু: নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে বহু বিয়েই ভেঙে যাওয়ার জোগাড়! আবার মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা তুলতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতেই ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে সাড়ম্বরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কর্ণাটকের বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডি। এই ঘটনা ঘিরে  বড়সড় বিতর্কও তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর বয়ান ঘিরে নয়া বিতর্কে জড়ালেন এই মাইনিং ব্যারণ। তাঁর বিরুদ্ধে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের গাড়ির চালক তাঁর সুইসাইড নোটে এই দাবি করেছেন। ওই গাড়ির চালক কে জি রমেশ গতকাল মান্ড্য জেলার মাদ্দুরে একটি লজে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। রমেশের একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নোটে বিশেষ জমি অধিগ্রহণ আধিকারিক (বেঙ্গালুরু) ভীমা নায়েকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন রমেশ। ভীমা ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে রমেশ আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেছেন। রমেশের অভিযোগ, ভীমার অবৈধ কাজকর্মের কথা তিনি জানতে পেরেছিলেন। ভীমা যে বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী রেড্ডির মেয়ের বিয়ের জন্য ১০০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছিলেন, তা জেনে ফেলাই তাঁর কাল হল।এজন্য তাঁকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। যার জেরে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন বলে জানিয়েছেন রমেশ।

এই ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।

হাতে লেখা ওই সুইসাইড নোটে অভিযোগ করা হয়েছে, ভীমা নায়েক একটি গেস্ট হাউসে রেড্ডি ও বিজেপি সাংসদ শ্রীরামালুর সঙ্গে দেখা করেন। ভীমার সঙ্গে ছিলেন অন্য এক ব্যক্তি। ভীমা সেখানে কর্নাটকের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন। এজন্য তিনি ২৫ কোটি টাকা দিতেও রাজি হন।

সুইসাইড নোটে রমেশ আরও অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ নভেম্বর ভীমা একটি হোটেলে গিয়ে তাঁর সামনেই রেড্ডির মেয়ের বিয়েতে ২৫ কোটি সাদা টাকা দেওয়ার দাবি করেছিলেন। ভীমা শ্রীরামালুর কাছেও ঘনঘন গিয়েছিলেন।

বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদের সঙ্গে ভীমার বৈঠকে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত গাড়িগুলির নম্বরও রমেশ তাঁর নোটে উল্লেখ করেছেন।

সুইসাইড নোটে রমেশের অভিযোগ, পুরনো নোটের বদলে ২০, ৫০, ১০০ ও ২০০০ টাকার নতুন নোট নিয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ।২০ শতাংশ টাকা কমিশনের বিনিময়ে অভিযুক্ত জমি অধিগ্রহণ অফিসার ১০০ কোটি কালো টাকা সাদা করিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

সুইসাইড নোটে রমেশ এও দাবি করেছেন, কালো টাকা সাদা করার কথা জেনে যাওয়ার পর থেকেই তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি, তাঁকে গত তিনমাস ধরে মাইনেও দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর জেরেই তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন।

উল্লেখ্য, নোটে বাতিলের ধাক্কায় যখন সারা দেশের মানুষ নাজেহাল তখন গত ২১ নভেম্বর রেড্ডির মেয়ের বিয়ে হয় ধূমধাম সহকারে। এই ঘটনায় আয়কর দফতর বিয়ের খরচ সংক্রান্ত তথ্য তলব করেছে এবং রেড্ডির অফিসও পর্যবেক্ষণ করে এসেছে।

অবৈধ খনন কাজের মামলায় সু্প্রিম কোর্টের জামিনে ছাড়া পেয়েছে বেল্লারির মাইনিং ব্যারন রেড্ডি। এর আগে ৪০ মাস তাঁকে জেলে কাটাতে হয়।

রমেশের সুইসাইড নোটে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অস্বীকার করেছেন শ্রীরামালু। তিনি পাল্টা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন।