চেন্নাই: রাজাজী হলে শায়িত তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মরদেহ। বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ অসংখ্য মানুষ অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন দ্রাবিড় রাজনীতির অন্যতম মহীরুহকে। গতকাল রাত থেকে আম্মার মরদেহের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন শশীকলা নটরাজন, ‘পুরুতচি থালাইভি’ -র রাজনৈতিক জীবনের বহু ওঠাপড়ায় যেমনভাবে ঢাল হয়ে পাশে ছিলেন তিনি।পরনে কালো শাড়ি, চোখমুখ বিধ্বস্ত। মাঝেমধ্যেই প্রিয়নেত্রীর মুখে-কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। জয়ললিতাকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাও বলছেন তিনি।

জয়ললিতার সঙ্গে শশীকলার সম্পর্কে বহুবারই টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই দূরত্ব কোনওদিনই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফের শশীকলা ফিরে এসেছেন 'আম্মা'-র স্নেহচ্ছায়ায়। তাই জয়ললিতার মৃত্য শশীকলার কাছে স্বজনবিয়োগের মতোই। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর পোয়েজ গার্ডেনের বেদ নিলয়ম বাসভবনে সহকারী ও আধিকারিক সহ হাতেগোনা যে কয়েকজন বাসিন্দা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই ৫৯ বছরের শশীকলা।

গত ২২ সেপ্টেম্বর জয়ললিতা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সর্বদা তাঁর রোগশয্যার পাশে ছিলেন শশীকলা।

জয়ললিতার তিন দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে দুজনের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝড় উঠেছে। কখনও কখনও ভোটে এআইএডিএমকে-র হারের জন্য কোনও কোনও মহলকে শশীকলার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। জয়ললিতার সঙ্গে শশীকলাও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় জড়িয়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। করে অবশ্য কর্নাটক হাইকোর্ট বেঙ্গালুরু ট্রায়াল কোর্টের ওই রায় খারিজ করে দিয়েছিল।

কয়েক বছর আগে জয়ার সঙ্গে শশীকলার সম্পর্ক দুদুবার তলানিতে ঠেকেছিল। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শশীকলা ও তাঁর বাড়ির লোকজনকে দল থেকে বহিষ্কৃত করেছিলেন এআইএডিএমকে নেত্রী। কিন্তু সেই বিচ্ছেদ স্থায়ী হয়নি। ফের জয়ললিতার কাছেই ফিরে আসেন শশীকলা।



যে কোনও অনুষ্ঠানই হোক বা ভোটের প্রচার, জয়ললিতার সঙ্গে শশীকলাকে সর্বত্রই দেখা যেত। এককথায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে আসনে বসতেন শশীকলা। ‘আক্কা’ (দিদি)-র সুযোগসুবিধার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন তিনি।

দক্ষিণ তামিলনাড়ুর মান্নারগুড়ির  অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে শশীকলা জয়ার সান্নিধ্যে আসেন ৮০-র দশকে। একটি ভিডিও কোম্পানির মালিক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কভার করতে গিয়ে জয়ার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। নিজের পরিচিত মহলে চিন্নাম্মা হিসেবে পরিচিত শশীকলা ধীরে ধীরে বেদ নিলয়মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। এমনকি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এআইএডিএমে দলের ওপরও তার প্রভাব অপরিসীম।