নয়াদিল্লি: ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। সুপ্রিম কোর্টের চার শীর্ষ বিচারপতি অভিযোগের আঙুল তুললেন প্রধান বিচারপতির দিকে। এই ঘটনায় আইনজীবী মহল হতচকিত। তাঁদের মধ্যে থেকে উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলেছেন, চার বিচারপতির সাংবাদিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এমন ঘটনার কথা ভাবাও যায় না। আবার অন্য আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন কিছু কারণ নিশ্চয় থাকতে পারে, যাতে সাংবাদিক বৈঠক না করে উপায় ছিল না।
কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেছেন, এই ঘটনা বিচারবিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল। প্রবীণ আইনজীবী কেটিএস তুলসি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, অশ্বিনী কুমার, প্রাক্তন বিচারপতি আরএস সোধি, মুকুল মুদগল এই নজিরবিহীন সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ ওই সাংবাদিক বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে চার বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিজেপি নেতা তথা রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মন্যম স্বামী বলেছেন, যখন এ ধরনের বিচারপতিরা বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন তখন তাঁদের ত্রুটি খোঁজার থেকে বেশি জরুরি হল তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বিচারপতি ও ওই চার বিচারপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনার মাধ্যমে সমগ্র পরিস্থিতির সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বিচারতি সোধি অবশ্য এ ভাবে সাংবাদিক বৈঠকের সমালোচনা করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে কি সুপ্রিম কোর্ট ওই বিচারপতিরা চালাবেন। সমগ্র ঘটনায় তিনি মর্মাহত বলে জানিয়েছেন সোধি।
বিচারপতি মুদগল বলেছেন, ওই চার বিচারপতি সিনিয়র মোস্ট। তাঁরা যখন কোনও বিষয় প্রকাশ্যে আনছেন, তখন নিশ্চয় এমন কিছু কারণ ছিল যে, এভাবে জনসমক্ষে জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেছেন। মুদগল বলেছেন, ওই চার বিচারপতিই প্রচারকামী নন। অকারণে প্রচার লাভে তাঁরা আদৌ উত্সুক নন।
ইন্দিরা জয়সিংহ বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্তব্যের তাগিদেই চার বিচারপতির এই সাংবাদিক বৈঠক।
অ্যডভোকেট প্রশান্ত ভূষণও এই ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে বলেছেন, কোনও উপায় না দেখেই বাধ্য হয়ে সাংবাদিক বৈঠকের চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চার বিচারপতি। তিনি আরও বলেছেন, ওই চার বিচারপতি খুবই দায়িত্ববান। তাঁরা যদি এমন করেন, তাহলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। কেটিএস তুলসীর গলাতেও একই ধরনের সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ওই বিচারপতিরা যখন সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলছিলেন তখন তাঁদের মুখে যন্ত্রনার ছাপ যে কেউ লক্ষ্য করতে পারবে। উপায়ান্তর না দেখেই তাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করেছেন।
তুলসী আরও বলেছেন, সমগ্র বিষয়টি বিচারবিভাগের স্বাতন্ত্র্যের। এক্ষেত্রে ন্যায়ের প্রশ্ন জড়িত। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যে আইন, তা বিচারপতিদের ওপর আরও কঠোরভাবে প্রযোজ্য। কারণ, বিচারপতিদের সমস্ত ধরনের সন্দেহের উর্দ্ধে থাকতে হয়।
এদিনের ঘটনাকে পীড়াদায়ক আখ্যা দিয়েছেন প্রবীণ অ্যাডভোকেট সলমন খুরশিদ। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে চলবে তা নিয়ে সিনিয়র বিচারপতিদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিচারপতিদের মধ্যে আলোচনার পথ বন্ধ হবে না বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রাক্তন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে দুঃখের দিন বলে মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনা দেশের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সততার ভিত্তিমূলে আঘাত করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।