নয়াদিল্লি: লোকসভায় অমিত শাহের নিশানায় প্রয়াত জওহরলাল নেহরু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার লোকসভায় জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক সমস্যা ও সন্ত্রাসবাদের জন্য প্রয়াত প্রথম প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করলেন। সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে প্রথম ভাষণেই তিনি নেহরু, কংগ্রেসকে তুলোধনা করেন, বলেন, আগের বিভিন্ন কংগ্রেস সরকারের নীতির জন্যই জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আজ কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশ আমাদের সঙ্গে নেই। পাকিস্তান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন কাশ্মীরে আগ্রাসন করে তার এক তৃতীয়াংশ ভূখন্ড কব্জা করে নিল, তখন কে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল? জওহরলাল নেহরু যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরের ওই অংশ নিয়ে চলে গেল!
নেহরু সে সময় তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী সর্দার পটেলের মতামত নেননি বলেও অভিযোগ করে অমিত শাহ বলেন, উনি তখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে পটেলের মত শুনলে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) তৈরিই হত না, কাশ্মীরেও সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্ব থাকত না। ভারতীয় ভূখণ্ডের এক তৃতীয়াংশ এখন পাকিস্তানে রয়েছে, বলেন তিনি।
কংগ্রেস সাংসদরা তাঁর অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য জবাবে দাবি করেন, তিনি নেহরুর নাম করবেন না, শুধু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিন অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীরে ৩ জুলাই থেকে আরও ৬ মাস রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর বিধিবদ্ধ প্রস্তাব পেশ করেন নিম্নকক্ষে। সেটি পাশও হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশন নির্ঘন্ট ঘোষণা করলেই জম্মু ও কাশ্মীরে অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক পথে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় আজ জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ(সংশোধনী) বিল, ২০১৯-ও পাশ হয়। আগের সরকারের জারি করা একটি অর্ডিন্যান্সের বদলে বিলটি আনা হয়েছে। কংগ্রেস ও কয়েকটি বিরোধী দলের সদস্যদের তীব্র আপত্তির মধ্যেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বৃ্দ্ধি ও সংশোধনী বিলটি ধ্বনিভোটে পাশ হয়। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে প্রত্যক্ষ নিয়োগ, পদোন্নতি, পেশাদার কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বসবাসকারী লোকজনের মতোই প্রত্যক্ষ সুযোগ পাবেন জম্মু ও কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে থাকা লোকজনও।
কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে বিতর্কের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মোদি সরকার সন্ত্রাসবাদ, তার ভাবধারার প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা সুনিশ্চিত করা, দেশকে সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করাই সরকারের উদ্দেশ্য। সরকারের এই অবস্থানের জন্যই যারা দেশকে ভাঙতে চায়, তারা ভয় পেয়েছে। আগামীদিনে তারা আরও ভীত হবে। আমরা টুকরে টুকরে বাহিনীর লোক নই। যারা ভারতকে টুকরো টুকরো করতে চায়, তাদের ভয় পাওয়াতে হবে।
কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, বিরোধী শিবিরে কেউ কেউ বলছেন, রাষ্ট্রপতি শাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। সারা দেশে এখনও পর্যন্ত ১৩২ বার সংবিধানের ৩৫৬ ধারা (রাষ্ট্রপতি শাসন) জারি হয়েছে। ৯৩ বারই তা প্রয়োগ করেছে কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক স্বার্থে কখনও ৩৫৬ ধারা ব্যবহার করিনি।