নয়াদিল্লি: বিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে ফের আসরে সনিয়া গাঁধী। দিল্লিতে নৈশভোজে ২১টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ। যোগ দেন তৃণমূল-সিপিএম-সহ ১৯টি দলের প্রতিনিধি।
নজর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। লক্ষ্য, মোদী সরকারকে উৎখাত করা। বৃহত্তর মোদি বিরোধী জোট গঠন করতে এবার আসরে নামলেন সনিয়া গাঁধী। মঙ্গলবার দশ জনপথে ২১টি বিরোধী দলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন তথা ইউপিএ’র প্রধান সনিয়া গাঁধী। নৈশভোজে হাজির ছিলেন ডিএমকে, এসপি, বিএসপি, আরজেডি, ন্যাশনাল কনফারেন্স-সহ ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কয়েকদিন আগেই মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে সনিয়া মন্তব্য করেন, জাতীয় স্তরে কোনও কোনও ইস্যুতে আমরা হাত মিলিয়েছি। কিন্তু, তৃণমূল স্তরে আমরা একে অপরের প্রতিপক্ষ। প্রত্যেক দলেরই বাধ্যবাধকতা আছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ কয়েকটি রাজ্যে আমাদেরও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। তাই কাজটা কঠিন। তবে আমরা যদি বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবি, দেশের কথা ভাবি, তাহলে স্থানীয় স্তরের বিভেদ ভুলে আমাদের একসঙ্গে আসতেই হবে।
এই প্রেক্ষাপটেই পূবে তৃণমূল থেকে থেকে শুরু করে পশ্চিমে শরদ পওয়ারের এনসিপি, উত্তরে মায়াবতী-অখিলেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণে করুণানিধির ডিএমকে-কে একমঞ্চে আনতে চাইছে কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই এদিনের নৈশভোজ।


https://twitter.com/OfficeOfRG/status/973602195324141570

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এ রাজ্য থেকে তৃণমূলের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির রাজ্যসভায় যাওয়া একপ্রকার পাকা। উল্টোদিকে তৃণমূল সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। কিন্তু, রাজ্যে লড়াই হলেও, সনিয়ার ডাকে নৈশভোজে তৃণমূলের পাশাপাশি উপস্থিত ছিল সিপিএমও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের প্রতিনিধি মহম্মদ সেলিম।
সূত্রের খবর, নৈশভোজের ফাঁকে সুদীপের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন সনিয়া গাঁধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খোঁজ নেন তিনি। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান সনিয়া। মহম্মদ সেলিম বলেন, পার্লামেন্ট চলছে না। মঞ্চ না দেখে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা। শরদ যাদবের পাশাপাশি নৈশভোজে যোগ দেন লালু-পুত্র তেজস্বীও।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বৃহত্তর মোদী বিরোধী জোট গড়তে না পারলে যে ২০১৯-এ লড়াইটা অত্যন্ত কঠিন, তার ইঙ্গিত গুজরাতের বিধানসভা ভোটেই বুঝতে পেরেছে কংগ্রেস। তারা একার দমে মোদীর গড়ে বিজেপিকে কিছুটা ধাক্কা দিতে পারলেও, ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে একাধিক আসনে এনসিপি এবং বিএসপি ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে, আর ক্ষতি হয়েছে কংগ্রেসের। নইলে ফল অন্যরকম হলেও হতে পারত। এই পরিস্থিতিতে মোদী বিরোধী ভোট ভাগাভাগি রুখতে মরিয়া কংগ্রেস।
নৈশভোজের পরপরই ট্যুইটারে রাহুল গাঁধী লেখেন, সনিয়া গাঁধীর আয়োজনে একটা দারুন নৈশভোজ। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সাক্ষাতের এটা একটা সুযোগ। অনেক বেশি রাজনৈতিক আলোচনার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রাণশক্তি এবং উষ্ণ আন্তরিকতা।
যদিও, বিজেপি এই বৃহত্তর মোদী বিরোধী জোট গঠনের চেষ্টাকে কটাক্ষ করছে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, এই জোট ফের প্রত্যাখ্যান করবে মানুষ। এদিন সনিয়ার ডাকা নৈশভোজে উপস্থিত থাকলেও, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও নিজের মতো করে মোদী বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেষপর্যন্ত যদি সবাই একজোট হয়, তাহলে কিন্তু লড়াইটা জমজমাট হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা।