শ্রীনগর: প্রথমে নৌকাডুবির পর নিজের জীবন বিপন্ন করে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তারপর এক পর্যটকের ব্যাগ তোলার জন্য জলে ঝাঁপ দেন। সেটা করতে গিয়েই স্রোতের টানে ভেসে গেলেন গুলাম মহম্মদ গুরু নামে ওই নৌকা চালক। তিনি আর জল থেকে ওঠেননি। তিন দিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ নেই।

 

যে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচানোর পর তাঁদের একজনের ব্যাগ তোলার জন্য জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন গুরু, সেই পর্যটকরা অবশ্য ফিরেও তাকাননি। তাঁরা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। অমানবিক এই ঘটনার সাক্ষী ভূস্বর্গ কাশ্মীর।

 

ঠিক কী হয়েছিল? মহম্মদ সুলতান কালু নামে অপর এক নৌকা চালক বলেছেন, বৃহস্পতিবার ১০ জন পর্যটক ঝিলম নদীতে ঘুরবেন বলে নৌকা ভাড়া করেন। ৭ জনকে একটি মোটরবোটে নিয়ে যান কালু। গুরু ও তাঁর তুতো ভাই আব্দুল রশিদ বাকি ৩ জন পর্যটককে নিয়ে একটি শিকারায় চড়েন। ঝিলমে বেড়িয়ে ফেরার সময় হঠাৎ উল্টে যায় মোটরবোট। পর্যটকরা আতঙ্কে চিৎকার শুরু করে দেন। কালু, গুরু ও রশিদ মিলে পর্যটকদের উদ্ধার করেন।

 

এর কিছুক্ষণ পরেই এক পর্যটকের ব্যাগ নদীতে পড়ে যায়। সেই ব্যাগ তুলতে নদীতে ঝাঁপ দেন দক্ষ সাঁতারু গুরু। ব্যাগ নিয়ে ফিরেও আসছিলেন। কিন্তু জলের তোড়ে ভেসে যান।

 

যাঁদের জন্য নদীতে ঝাঁপ দিলেন গুরু, সেই পর্যটকরাই তাঁকে ভেসে যেতে দেখেও ভ্রুক্ষেপ করেননি। তাঁরা একটি অটো রিকশা ভাড়া করে সেখান থেকে চলে যান। তাঁদের পরিচয়ও জানতে পারেননি কালুরা।

 

পুলিশ ও নৌসেনার ডুবুরিরা গুরুর দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও তাঁরা সফল হননি। ওই নৌচালকের পরিবারের লোকেরা তিন দিন ধরে নদীর পাড়েই আছেন। তাঁদের এখন প্রধান চিন্তা জীবনধারণের অবলম্বন। কারণ, পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে শিকারাটি ভেঙে গিয়েছে।

 

পর্যটকরা আর ফিরবেন না, গুরুও হয়তো না। মানবিকতা ও অমানবিকতার দোলাচলে হতাশাই সম্বল তাঁর পরিজনদের।