ফেসবুকে সুনয়না লিখেছেন, ‘অমিতাভ স্যার, এমন কোনও পার্টি হয়নি যার শেষে আপনার গানে আমরা নাচিনি। বন্ধুরা মজা করে আমাদের অমিতাভ আর জয়া বলে ডাকত, কারণ আমার স্বামী লম্বায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি আর আমি ৫ ফুট। শাহরুখ স্যার, শ্রীনিবাস আপনার বিরাট ফ্যান ছিল, তার জোরাজুরিতেই আপনার শেষ ছবি রইস-ও দেখেছি আমরা। আমি ভালবাসার বার্তা পৌঁছতে আপনাদের সাহায্য চাই, আমেরিকায় বাসরত প্রত্যেক বিদেশি নাগরিককে এ কথা জানাতে চাই যে তাঁদের লড়াই গুরুত্ব পাবে।’
মঙ্গলবার এই ব্লগ লিখেছেন সুনয়না। ওদিনই তাঁর স্বামীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
সদ্য বিধবা তরুণী লিখেছেন, কীভাবে ২০০৬-এ অর্কুটে তাঁদের আলাপ, ভাল লাগা। তিনি আমেরিকায় আসতে চাইতেন, দুজনেই চেয়েছিলেন, আমেরিকার মাটিতে কেরিয়ার গড়ে নিতে।
সুনয়না জানিয়েছেন, তিন বোনের মধ্যে তিনি ছোট। শ্রীনিবাস তাঁকে সাহস যুগিয়েছিলেন, আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তিনি চাকরি শুরু করেছেন এক বছরও হয়নি, সবে গত বছরের মে মাস থেকে। এখন যে তিনি স্বাধীন, উপার্জনক্ষম, মানসিকভাবে শক্তিশালী- সবটাই শ্রীনিবাসের প্রেরণায়।
শ্রীনিবাসের প্যাশন ছিল অসামরিক উড়ান পরিবহন। এমনও হয়েছে, বাড়িতে শুধু ডিনার করতে এসেছেন, আবার কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। ফিরেছেন রাত দুটো-তিনটেয়। কিন্তু নিজের চাকরি নিয়ে ভীষণ খুশি ছিলেন তিনি।
সুনয়না যাতে সহজে চাকরি পেতে পারেন, তাই কানসাসে তাঁদের ঘর বাঁধা। বাড়ি তৈরির পর শ্রীনিবাস তা রং করেন নিজের হাতে। সন্তান জন্মের প্রস্তুতি হিসেবে সেটাই তাঁদের প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু শুধু একজনের জন্য তাঁদের সব স্বপ্ন টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
সুনয়না জানিয়েছেন, ২২ ফেব্রুয়ারির রাতে পুলিশ যখন স্বামীর মৃত্যুর খবর দিতে তাঁর বাড়িতে আসে, তিনি কিছুতেই খবরটা বিশ্বাস করতে পারেননি। বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, আপনারা ঠিক জানেন? আমি যাতে সনাক্ত করতে পারি, সে জন্য একটা ছবি দেখাতে পারেন? আপনারা যার কথা বলছেন, সে কি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা? পুলিশ শুধু মাথা নেড়ে জানায়, হ্যাঁ, তারা ঠিকই বলছে।
তিনি আরও লিখেছেন, তাঁর স্বামী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের গুণমুগ্ধ ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেও ছিল তাঁর।
ব্লগের শেষে মার্কিন সরকারকে তাঁর প্রশ্ন, প্রত্যেক অভিবাসী জানতে চায়, আমরা কি এখানকার? এই কি সেই দেশ যার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম? আমাদের পরিবার, সন্তানদের পক্ষে এই দেশ নিরাপদ কি?