নয়াদিল্লি: ২০০৪-২০১৪ পর্যন্ত কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ। তখন বারবার অভিযোগ উঠেছিল, খাতায় কলমে মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হলেও আসলে সরকার চালাচ্ছেন সনিয়া গাঁধীই। তবে বকলমে প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তাঁর কারও কাছে কোনও দায়বদ্ধতা নেই। যদিও এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে কংগ্রেস। এবার কেন্দ্র ঠিক করেছে, সনিয়ার জাতীয় উপদেষ্টা সংস্থার ৭১০টি ফাইল প্রকাশ্যে আনবে তারা, যাতে স্পষ্ট হয়ে যাবে, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে পদে পদে অগ্রাহ্য করে ১০, জনপথ থেকে দেশ চালিয়েছেন সনিয়া।


জানা যাচ্ছে, ওই ফাইলগুচ্ছে পরিষ্কার, সনিয়া তো বটেই, তাঁর জাতীয় উপদেষ্টা সংস্থারও সরকারের অলিন্দে একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল। কয়লা, বিদ্যুৎ, বিলগ্নীকরণ, রিয়্যাল এস্টেট, প্রশাসন, সামাজিক ও শিল্প ক্ষেত্রে নিয়মিত ছড়ি ঘোরাতেন ওই সংস্থার হর্তাকর্তারা। তার চেয়ারপার্সন ছিলেন সনিয়া নিজেই।

এক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা এনএসি-র সাজেশনই ছিল সরকার চালানোয় শেষ কথা। ওই সংস্থা আমলাদের ডেকে পাঠাতে পারত, মন্ত্রীদের চিঠি লিখতে পারত এমনকী সংস্থার দেওয়া প্রস্তাব কার্যকর করতে তাঁদের মত আছে কিনা জানতে রিপোর্ট চাইত। যদিও এর চার্টারে পরিষ্কার উল্লেখ, এটি শুধুই নীতি নির্ধারণ ও আইনগত ব্যাপারে সরকারের পাশে থাকার লক্ষ্যে গঠিত একটি সংস্থা। কিন্তু ফাইলে স্পষ্ট, এনএসি-র প্রস্তাব মেনে চলা ছাড়া তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে আর উপায় ছিল না।

ওইসব ফাইল আরও বলছে, সনিয়া গাঁধী যখন কোনও প্রস্তাব করেছেন, তখন তা চূড়ান্ত নির্দেশ বলে ধরে নিতে বাধ্য ছিল মনমোহনের ইউপিএ। যেমন ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত সংস্থা সংক্রান্ত ফাইল এন৯-এ ২০০৪-এর ১৬ সেপ্টেম্বরের একটি চিঠি রয়েছে। তা মনমোহনকে লেখেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বিলগ্নীকরণ কমিশনের পুনর্গঠন ও বর্তমান বোর্ডের জায়গায় নতুন বোর্ড গঠনের সুপারিশ করেন তিনি। সনিয়া লেখেন, বোর্ডের কাজকর্ম শুধু রাষ্ট্রায়ত সংস্থার পুনর্গঠন, তা বন্ধ করে দেওয়া বা বিক্রি করে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে তাঁর আশা। সংস্থাগুলির পুনর্গঠনই যেন ওই বোর্ডের মূল উদ্দেশ্য হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ফাইলে দেখা যাচ্ছে, মনমোহন সনিয়ার হুকুম তামিল করেছিলেন।

২০০৭-এর আর একটি ফাইল বলছে, কয়লা সংক্রান্ত একটি কেন্দ্রীয় পুনর্মূল্যায়ন বৈঠক জাতীয় উপদেষ্টা সংস্থার অফিসে হবে বলে ঠিক হয়, যে বরিষ্ঠ আমলারা সেই বৈঠকে থাকবেন, তাঁদের নাম ও পদের বিবরণ চায় এনএসি। আবার ২০০৫-এর ২৯ অক্টোবর এনএসি-তে যে বৈঠক হয়, তাতে পরিষ্কার, কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের গোপনীয়তা বলে কিছুই বজায় ছিল না। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, সংস্থার বিভিন্ন প্রস্তাবের বাস্তব রূপ দেওয়া সরকারের কাজ হলেও তার দিকে নজর রাখতে হবে ও কাজ কীভাবে হচ্ছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখতে হবে।

যদিও কংগ্রেস অস্বীকার করেছে এইসব ফাইলের বক্তব্য। তাদের বক্তব্য, সনিয়া ২০০৬-এর মার্চে এনএসি থেকে পদত্যাগ করেন, আবার যোগ দেন ২০১০-এর জুনে। তিনি কখনও কোনও নীতি নির্ধারণে নাক গলাননি। গরিব, উপজাতি ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কাজ করত এনএসি। এতে অসুবিধে কী আছে?