নয়াদিল্লি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হওয়া তিন বছর বয়সি ভারতীয় শিশুকন্যা শেরিন ম্যাথুজের দত্তকের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধীকে অনুরোধ করলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি আজ ট্যুইট করে বলেছেন, ‘বেবি সরস্বতীর পরে শেরিন ম্যাথুজের ঘটনা ঘটল। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রীকে শেরিনের দত্তকের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছি।’ সুষমা আরও জানিয়েছেন, হিউস্টনে ভারতের কনসাল জেনারেল অনুপম রায়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেবি সরস্বতী ও শেরিনের মৃত্যুর ঘটনার যাতে উপযুক্ত বিচার হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এখন থেকে শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের আগাম অনুমতি থাকলে তবেই দত্তক নেওয়া শিশুদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে।



২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বিহারের গয়ায় জন্ম হয় শেরিনের। বাবা-মা তার প্রতিপালন করতে অক্ষতার কথা জানান। শিশুটিকে নালন্দায় অধুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদার টেরেজা অনাথ সেবা আশ্রমে পাঠানো হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিবার শিশুটিকে দত্তক নেয়।



এ মাসের ৭ তারিখ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় শেরিন। রবিবার টেক্সাসের ডালাসের শহরতলিতে একটি কালভার্ট থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। তার দত্তক-বাবা ওয়েসলি ম্যাথুজকে প্রথমে গ্রেফতার করা হলেও, ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে শেরিনের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়েসলির বয়ানে অসঙ্গতি দেখা গিয়েছে। তিনিই শিশুটিকে খুন করেছেন বলে সন্দেহ জোরাল হয়েছে।



ভারতে শিশু দত্তক বিষয়ক নোডাল এজেন্সি চাইল্ড অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির (সিএআরএ) আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শেরিনকে যখন দত্তক নেওয়া হয়, তখন থেকেই তার ওজন বয়সের তুলনায় কম ছিল। সে অপুষ্টিতেও ভুগছিল। গত বছরের ৮ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দত্তক বিষয়ক সংস্থা হল্ট ইন্টারন্যাশনাল চারটি রিপোর্ট পাঠিয়ে সিএআরএ-কে জানায়, শেরিন তার নতুন বাড়িতে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে। সে নতুন পরিবেশে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। তবে পরে অন্য এক রিপোর্টে বলা হয়, শেরিনের খাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে বাইরের খাবার খেলেও, বাড়ির খাবার খেতে চাইছে না।



শেরিন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে ওয়েসলি দাবি করে, দুধ খেতে না চাওয়ায় শাস্তি হিসেবে রাত তিনটেয় সে শেরিনকে বাড়ির বাইরে বার করে দেয়। যদিও গ্রেফতার হওয়ার পর বয়ান বদলে যায় শেরিনের দত্তক-বাবার। সে এখন দাবি করছে, শেরিন তার কথা শুনছিল না। সেই সময় সে শেরিনকে দুধ খেতে বাধ্য করে। এমন সময় দুধ গলায় আটকে যায়। শেরিন কাশতে শুরু করে, এবং তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। বাড়িতে নার্স স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও, হাতে ফোন থাকা সত্ত্বেও মেয়েকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেনি ওয়েসলি। তার সামনেই শেরিনের মৃত্যু হয়। এরপর সে নিজে হাতে দেহটি বাইরে ফেলে আসে। এই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।