আগ্রা: তাজমহলকে ‘ভারতের রত্ন’ ও ‘ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ হিসেবে উল্লেখ করে মোঘল আমলের এই স্থাপত্যকে সংরক্ষণ করতে দায়বদ্ধ হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।


বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার তাজমহল পরিদর্শনে যান আদিত্যনাথ। এদিন আগ্রায় সরকারি ইন্টার কলেজ ময়দানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদিত্যনাথ বলেন, কে কী বলছে, তাতে অন্যদের কান দেওয়া উচিত নয়। তাজমহল আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একে সংরক্ষণ করতে সরকার দায়বদ্ধ।


মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, কখন, কেন ও কীভাবে তাজমহল তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই। যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, তাজমহল এদেশের কৃষক ও মজদুরদের শ্রম, অর্থ দিয়েই তৈরি হয়েছিল।


আদিত্যনাথ বলেন, তাজমহল হল ভারতের রত্ন এবং বিশ্বকে উপহার। সারা বিশ্ব থেকে তাজমহল দেখতে লাখো পর্যটক আসেন। এর জন্য বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে আগ্রা। একে ঘিরে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে।


তিনি যোগ করেন, আগ্রা এমন একটা জায়গা যেখানে বিশ্বের পাঁচটি হেরিটেজ সাইট রয়েছে-- তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট, ফতেপুর সিকরি, সিকান্দরা এবং ইতিমাদ-উদ-দৌলার সৌধ রয়েছে। আদিত্যনাথের মতে, প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার পর্যটক আগ্রায় আসেন।


আদিত্যনাথের দাবি, পরিকাঠামো উন্নীত করলে এই সংখ্যাটাই আড়াই থেকে ৩ লক্ষে পৌঁছবে। তিনি আশ্বাস দেন, আগ্রাকে আন্তর্জাতিক টুরিস্ট হাবে পরিণত করবে তাঁর সরকার। তেমন হলে, পর্যটন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনই বিপুল কর্মসংস্থান হবে।


তাঁর এই সফর নিয়ে রাজনীতি করার জন্য বিরোধীদের একহাত নেন আদিত্যনাথ। বলেন, যাঁরা এধরনের মন্তব্য করছেন, তাঁরাই জাতপাতের নামে সমাজকে বিভক্ত করেছে। মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে তাঁরা রাজ্যে উন্নয়ন হতে দেননি। অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং দুর্নীতিতে সায় দিচ্ছেন। তাঁদের ভাবনার জন্য আমি দুঃখিত।



এর আগে, এদিন এই ঐতিহাসিক সৌধের বাইরে পার্কিং লটে স্বচ্ছতা অভিযানে অংশ নেন তিনি। মুখে মুখোশ বেঁধে, হাতে দস্তানা  এবং টুপি পরে ঝাড়ু দিয়ে তাজমহলের পশ্চিম গেটের কাছে জঞ্জাল সাফাই হাত লাগান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন পদস্থ সরকারি আধিকারিক এবং পুলিশ কম্যান্ডোরা।


যোগীর এই সফরের সময় তাজমহলের বাইরে বিজেপি সমর্থকরা জয় শ্রীরাম ধ্বনি তোলেন। এদিন সকালেই আগ্রায় পৌঁছন যোগী আদিত্যনাথ। প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সপ্তম শতাব্দীর এই বিশ্বখ্যাত সৌধ পরিদর্শনে যান তিনি। তাঁর এই সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। মোতায়েন ১৪ হাজার পুলিশ কর্মী।


তাজমহল ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয় উত্তরপ্রদেশের পর্যটন বিভাগের বুকলেটে তাজের নাম বাদ যাওয়ার পর থেকেই। এরপরই বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম তাজকে ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক বলে মন্তব্য করেন। বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার দাবি করেন, তামজহল আসলে ছিল শিব মন্দির।


গত বছরে বিহারে একটি জনসভায় যোগী দাবি করেছিলেন যে, ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ নয় তাজ। তাই বিদেশী অভ্যাগতদের তাজমহলের রেপ্লিকার পরিবর্তে গীতা উপহার দেওয়া উচিত।


সেই মন্তব্য থেকে সরে এসে যোগী স্বয়ং তাজমহল সফরে এলেন। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাজের শহরে পর্যটনের উন্নয়নের জন্য সরকার ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয় করবে বলে ঘোষণা করেছেন।