শ্রীনগর: তিন ভারতীয় সেনা জওয়ান কাশ্মীরের মাছিল সেক্টরে পাকিস্তানের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানাল সেনাবাহিনী। পাক সেনা জওয়ানরা নিহতদের একজনের দেহের অঙ্গচ্ছেদ করে বিকৃত করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এমন অমানবিক, নৃশংস আচরণ সন্ত্রাসবাদী ও পাক সেনার স্থায়ী সদস্যদের নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিমেরই, দাবি ভারতের। সীমান্তের ওপার থেকে গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন ওই তিন জওয়ান।

সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, মাছিলে কর্মরত অবস্থায় তিন সেনা জওয়ান পাক বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। একজনের অঙ্গহানি করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সেনার তরফে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমন কাপুরুষোচিত আচরণের যে জবাব ভারত দেবে, তা হবে চরম মাত্রার। প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, তিন সেনা জওয়ানের হত্যা ও তাদের একজনের অঙ্গচ্ছেদ করা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরকে অবহিত করেছেন ভাইস চিফ অব আর্মি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াত। রাওয়াতের বক্তব্য শোনার পর পাক বর্ডার অ্যাকশন টিমের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাহিনীকে নির্দেশ দেন, যতটা কড়া বার্তা দেওয়া সম্ভব, পাকিস্তানকে দিতে হবে। ট্যুইটে পাক বাহিনীর  ভারতীয় জওয়ানের অঙ্গচ্ছেদকে ‘কাপুরুষের কাজ’ আখ্যা দেন তিনি।

 


২৯ অক্টোবরের পর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতীয় জওয়ানের দেহ বিকৃতির অভিযোগ উঠল পাক সেনার বিরুদ্ধে। গত মাসেই ২৭ বছর বয়সি ভারতীয় জওয়ান সেপাই মনদীপ সিংহকে মেরে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করে পাকিস্তান সেনার গুলিবর্ষণের সুযোগ নিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ফিরে যায় সন্ত্রাসবাদীরা। মনদীপ ওদের সঙ্গে লড়ে প্রাণ দিয়েছিলেন।

প্রতিরক্ষা সূত্রের দাবি, উরি হামলার জবাবে গত সেপ্টেম্বরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর পাকিস্তান এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত গ্রামগুলিতে জনবসতির ওপর গোলাগুলি চালাচ্ছে।  লাগাতার  নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে পাক বাহিনী।


ভারতীয় সেনার তরফে এমন আচরণকে ‘পাশবিক’ বলে নিন্দা করে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্র-বহির্ভূত বাহিনীগুলির লোকজনের হিংস্র চেহারাই প্রতিফলিত হচ্ছে এমন আচরণে। এর যথাযোগ্য জবাব মিলবে।

১৯৯৯-এর কার্গিল সংঘর্ষের সময়ও ধরা পড়ার পর পাক বাহিনীর অকথ্য অত্যাচারের শিকার হন ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়া, অর্জুনরাম বাসোয়ানা, মুলারাম বিদিয়াসার, নরেশ সিংহ সিনসিনওয়ার, ভানোয়ার লাল বাগারিয়া ও ভিখারাম মুধ প্রমুখ ভারতীয় জওয়ান। গরম লোহার শিক ঢুকিয়ে ওদের কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়, চোখ উপড়ে নেওয়ার পাশাপাশি লিঙ্গচ্ছেদও করে পাক সেনা। ময়না তদন্তে দেখা যায়, ওঁদের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়। হাত-পা কেটে, দাঁত ভেঙে দিয়ে, মাথার খুলি ফাটিয়ে বর্বরতা, নারকীয়তার পরিচয় দেয় পাক জওয়ানরা।

২০১৩-র ৮ জানুয়ারি পাক সেনা জওয়ানরা কৃষ্ণগতি সেক্টরে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে ল্যান্স নায়েক হেমরাজ ও ল্যান্স নায়েক সুধাকর সিংহকে হত্যা করে দুজনের দেহের ওপর নির্যাতন করে। হেমরাজের মাথা কেটে দেয়।