নয়াদিল্লি: মা উঠছেই না। তাকে জাগিয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা করছে ছোট্ট একটি শিশু। টলোমলো পায়ে এগিয়ে এসে নরম হাত দুটি দিয়ে মায়ের শরীরে ঢাকা চাদর টানছে সে, যাতে মা যাতে উঠে ওকে কোলে নেয়! আসলে ওর মা যে আর যে কোনওদিন ঘুম থেকে উঠবে না, চিরঘুমে ঘুমিয়ে রয়েছে, তা বোঝার মতো বয়স ওর হয়নি। বিহারের মুজফফরপুর স্টেশনের এই এই মর্মস্পর্শী ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ালে দেওয়ালে ঘোরাফেরা করছে। জানা গেছে, গুজরাত থেকে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ফেরার পথে খিদে ও তেষ্টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই মহিলা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, প্ল্যাটফর্মে শোয়ানো রয়েছে ওই মহিলার দেহ। নিথর শরীর ঢাকা চাদরে। মা নড়াচড়া করছে না দেখে শিশুটি এগিয়ে এসে ওই চাদর ধরে টান দেয়। চাদর সরানোর চেষ্টা করে। একবার নিজেকেও ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা করতে না পেরে চাদরটিকে ফেলে চলে যায় শিশুটি।
ভিডিওটি ট্যুইট করেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় যাদব। হিন্দিতে ট্যুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘যে চাদর ধরে শিশুটি টানছে, তাতে যে ওর মায়ের দেহ ঢাকা হয়েছে, তা ও জানেইনা। ওর মা এখন চিরঘুমে। ট্রেনে চারদিন ধরে যাত্রায় তিনি ক্ষুদা ও তৃষ্ণায় মারা গিয়েছেন। ট্রেনে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? বিরোধীদের কি এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন তোলা উচিত নয়?’
সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুজফফরপুরের গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশের ডেপুটি এসপি রমাকান্ত উপাধ্যায় দাবি করেছেন, ওই ভিডিওতে যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে, তা ২৫ মে-র। ক্ষুদা ও ক্লান্তিতে নয়, ‘অন্য কারণে’ ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
উপাধ্যায় বলেছেন, এই মহিলা আহমেদাবাদ থেকে মুজফফরপুরে আসছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর দিদি ও জামাইবাবু। ৩৫ বছরের ওই মহিলার গত এক বছর ধরে ‘অন্য কিছু রোগে’র চিকিত্সা চলছিল। তিনি ‘মানসিকভাবে স্থিতিশীল ছিলেন না’।

ওই মহিলার জামাইবাবুকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে যে, তাঁর শ্যালিকা ট্রেনে আচমকাই মারা গিয়েছেন। ট্রেনে তাঁদের জল ও খাবারের কোনও সমস্যা হয়নি।

গত ২৪ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রকোপ রুখতে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বড় হয়ে উঠেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংকট। এই ঘটনা সেই সংকটের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।