হায়দরাবাদ:  সারা দেশজুড়ে মঙ্গলবার পালিত হল শিশুদিবস। শিশুদিবস পালন করতে স্কুলে গিয়েছিল আড়াই বছরের এন শিব রচিতও। হায়দরাবাদের আনন্দ বাগের মালকাজগিরিতে বচপন স্কুলের পড়ুয়া ছিল সে। শিশুদিবসের বিভিন্ন খেলায় অংশ নেওয়ার পর, নিজের মনেই স্কুলে খেলছিল রচিত। সকলের অলক্ষ্যে স্কুল চত্বরের মধ্যেই একটি খোলা আন্ডারগ্রাউন্ড জলের ট্যাঙ্কে পা পিছলে পড়ে গিয়ে অকালে মৃত্যু হল আড়াই বছরের ছোট্ট শিশুটির।


মঙ্গলবার সকালে বাবার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিল এন শিব রচিত। বাবা বাড়ি ফেরার পর মা, বিশালা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ছেলেকে স্কুলে টিফিন দিতে গিয়েছিল। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান বিশালা। প্রথমে স্কুলের তরফে দাবি করা হয় ছোট্ট রচিত স্কুলেই আসেনি। পরে ক্লাস টিচারের রেজিস্টারে দেখা যায় ক্লাসে উপস্থিত ছিল ছোট্ট রচিত। এমনকি ক্লাসে রাখাও ছিল রচিতের ব্যাগটি। বাচ্চাটির মা এসে তাগাদা না দিলে হয়তো খোঁজাই হত না ছোট্ট রচিতকে। স্বামীকেও ফোন করে ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান বিশালা।

বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর আচমকাই স্কুল চত্বরের মধ্যে একটি জলের সাম্পের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় রচিত। ছেলে কোলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছোটেন বাবা। প্রথমে এল.ভি হাসপাতাল, পরে সুরক্ষা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রচিতকে। সেখানেই চিকিত্সকরা রচিতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তবে স্কুলে চত্বরের মধ্যে এধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ফের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল স্কুলের নিরাপত্তার বিষয়টিকে। একটি ছোট বাচ্চা খেলতে খেলতে আচমকা উধাও হয়ে গেলেও, স্কুলের কারও নজরে আসেনি সেটা। শিশুটির মা স্কুলে না গেলে, কেউ হয়তো খেয়ালই করতেন না, বাচ্চাটি কোথায় গেল। গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। বাচ্চাদের স্কুল হলেও, পাঁচ ফুট গভীর সাম্পটির মুখে কোনও ঢাকা ছিল না। ট্যাঙ্কার থেকে সাম্পের মধ্যে জল ভরার পর, ঢাকনাটা খোলাই পড়ে ছিল। আর তার জেরেই ঘটে গেল এই মার্মান্তিক দুর্ঘটনা। কোল খালি হয়ে গেল এক মায়ের, অকালে ঝড়ে গেল একটি প্রাণ। সাম্পটি স্কুল বাড়ির সামনেই একটু কোনার দিকে রয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে কারও নজরে এল না , যে একটি বাচ্চা সেদিকে হেঁটে যাচ্ছে। বাচ্চাটিকে ওখানে পড়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শিশুটির বাবা। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে দেখা গিয়েছে স্কুলের তরফে বিরাট গাফিলতি রয়েছে, যার জেরেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। এই ঘটনার জন্যে যে বা যারা দায়ি, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে মালকাজগিরির ইন্সপেক্টর জানকি রেড্ডি। তদন্তে স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

অনিল কুমার এবং বিশালার ছোট ছেলে ছিল শিব রচিত। আর.কে নগরের বাসিন্দা এই দম্পতি। তাঁদের বাড়ি থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে রয়েছে এই নার্সারি স্কুলটি।