নয়াদিল্লি: প্রবল হই-হট্টগোলের মধ্যেই রাজ্যসভায় পেশ হল তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী বিল।


বুধবার, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ রাজ্যসভায় বিল পেশ করতে গিয়ে বলেন, লোকসভায় এই বিল পাস হওয়ার মধ্যেই মোরাদাবাদে এক মুসলিম মহিলাকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেয় তাঁর স্বামী। তবে, রাজ্যসভায় বিল পাস হওয়া নিয়ে চাপে শাসক শিবির। কারণ, বিজেপি সেখানে এখনও সংখ্যালঘু।


বিল পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলে বিরোধীরা। এদিন সভা্য় কংগ্রেস নেতা অনন্দ শর্মা বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর নোটিস দেন। তিনি ওই কমিটির সম্ভাব্য নামও সুপারিশ করেন।


উত্তরে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, কংগ্রেসের নোটিস নিয়ে তারা বিস্মিত। কারণ, যে কোনও নোটিস পেশ করার অন্ততপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে জানাতে হয়।


গত সপ্তাহে, লোকসভায়, তাৎ‍ক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী বিল পাসের সময় তৃণমূল ছিল নীরব। এ দিন রাজ্যসভায় তারা সুর চড়ায়। সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর জন্য আমি নিয়ম মেনে নোটিস দিয়েছি। সেটা গ্রহণও হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীরা হইচই করে অধিবেশন চলতে দিলেন না।


জানা গিয়েছে, কংগ্রেস, ও বিজেডি-ও বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পক্ষে। তীব্র আপত্তি সরকারের। বিরোধীরা অবশ্য তিন তালাক বিরোধী বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে অনড় থাকে।


রাজ্যসভা বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, বিলের আমরা বিরোধী নই। কিন্তু, আমরা চাই বিলটি সিলেক্ট কমিটি হয়ে আসুক। প্রয়োজনে এ নিয়ে ভোটাভুটি করুন।


মোদী সরকার বিরোধীদের এই দাবি মানতে রাজি নয়। এর জেরে তুমুল হইহট্টগোলে শেষমেশ মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন। শুক্রবার, শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। মোদী সরকার চাইছে এর মধ্যেই তাৎ‍ক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী বিল রাজ্যসভায় পাস করাতে। কিন্তু, তা যে মোটেই সহজ নয়, এ দিন বুঝিয়ে দিল এককাট্টা বিরোধীরা।


এর আগে, গত সপ্তাহে ধ্বনিভোটের মাধ্যমে বিলটি পাস হয় নিম্নকক্ষে। প্রস্তাবিত বিলে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বা তালাক-এ-বিদ্দতকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে, স্বামীর তিন বছরের হাজতবাসের সংস্থান রয়েছে প্রস্তাবিত বিলে।


প্রস্তাবিত বিলে তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার হওয়া মুসলিম মহিলাদের বেশ কিছু অধিকারও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সংশ্লিষ্ট মহিলা নিজের ও নাবালক সন্তানদের জন্য স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশের দাবি করতে ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারস্থ হতে পারবেন। পাশাপাশি, তিনি সন্তানদের হেফাজতের আবেদনও করতে পারবেন।


প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, যে কোনও আকারে—তা সে মৌখিক হোক বা লিখিত অথবা ফোন, ইমেল, এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যপের মতো বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পাঠানো তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বেআইনি ও অবৈধ হিসেবে বিচার্য হবে।


বিলের বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়েছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। তাদের দাবি, রাজ্যসভায় এই বিল পাস হলে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।