মিরাট: বুলন্দশহরের হিংসা নিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বিমানের টিকিট বুক করল উত্তরপ্রদেশ নবনির্মাণ সেনা। সম্প্রতি এই খ্যাতনামা অভিনেতা বুলন্দশহরে গোহত্যার অভিযোগে হিংসায় পুলিশকর্তার হত্যার নিন্দা করে বলেন, একজন পুলিশকর্মীর মৃত্যুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে গরুর মৃত্যু, এটা বিস্ময়কর। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাসিরুদ্দিন জানান, এদেশে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে, যাদের তিনি নির্দিষ্ট কোনও ধর্মীয় বিশ্বাস, পরিচয়ে বড় করে তোলেননি বলে তাঁর দাবি, তিনি গভীর ভাবে বিচলিত বোধ করছেন। সমাজে ইতিমধ্যেই বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাকে রোধ করা এখন কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তাঁর এই বক্তব্যে বিতর্কের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ নবনির্মাণ সেনার প্রধান অমিত জানি বলেছেন, নাসিরুদ্দিন শাহ ভারতে থাকতে ভয় পেলে পাকিস্তান চলে যেতে পারেন। উত্তরপ্রদেশ নবনির্মাণ সেনা তাঁর জন্য ১৪ আগস্টের পাকিস্তান যাওয়ার বিমানের টিকিট বুক করেছে। ওনার মতো আর কেউ আতঙ্কিত বোধ করলে তাঁকেও পাকিস্তানের বিমানের টিকিট বুক করে দেবে নবনির্মাণ সেনা।
গত ৩ ডিসেম্বর বুলন্দশহরে গরুর দেহাবশেষ মেলার পর ব্যাপক উত্তেজনা, হিংসা ছড়ায়। ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ ও সুমিত কুমার নামে এক স্থানীয় যুবকের প্রাণ যায়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্থানীয় বজরং দল নেতা যোগেশ রাজ।
গণপিটুনি ইস্যুতে তাঁর মন্তব্যের নিন্দা হওয়ায়, এমনকী কেউ কেউ তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলায়, বিস্মিত নাসিরুদ্দিন পাল্টা দাবি করেন, তাঁর কথার ভুল অর্থ করা হচ্ছে। শুক্রবার আজমীঢ়ে তিনি বলেন, যা বলেছি, তা একজন ‘উদ্বিগ্ন ভারতীয়’ হিসাবে। কথাটা আগেও বলেছি। তাহলে এবার নতুন কী বললাম যেজন্য আমায় বিশ্বাসঘাতক বলা হচ্ছে? এ তো ভারী অদ্ভূত। আমায় সমালোচনা শুনতে হবে। ওদের আমার সমালোচনার অধিকার থাকলে আমারও সেই অধিকার আছে। যে দেশকে ভালবাসি, যেটা আমার ঘর, তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তা কী করে অপরাধ হয়?
এদিকে দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলির আপত্তির জেরে গতকাল আজমেঢ় সাহিত্য উত্সবের আয়োজকরা একটি পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করে যেখানে নাসিরুদ্দিনের বলার কথা ছিল। তিনি ওখানে ভাষণ দেবেন, জানার পর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি সেখানে বিক্ষোভ দেখায়, তাঁর ছবি লাগানো পোস্টারেও কালি লেপে দেয় কয়েকজন। অনুষ্ঠানের আয়োজক রাসবিহারী গৌর বলেন, উত্সবের সূচনা করার কথা ছিল ওনার। কিন্তু বিক্ষোভের জেরে তিনি আসেননি।
নাসিরুদ্দিনের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের আবহে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বললেন, এ দেশের ডিএনএ-তে সহনশীলতা রয়েছে, তাই ওনার সন্তানদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। প্রবীণ অভিনেতার উদ্বেগসূচক মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, ওনার আবেগটা সঠিক, কিন্তু ওনার কথাগুলির সম্ভবত ভুল অর্থ করে তিলকে তাল বানানো হয়েছে। ভারত সহিষ্ণু দেশ। সহনশীলতা, সম্প্রীতি মজ্জায় আছে, কোনও পরিস্থিতিতেই সেই শক্তিশালী ঐতিহ্যকে নষ্ট করা সম্ভব হয়নি। ওনার সন্তানদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দেশটা সংবিধানের রাস্তায় এগিয়ে চলেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাউকে ভয় পাওয়ার কীই বা আছে।