নয়াদিল্লি: বাংলাদেশ তৈরির অভিযান শেষ হলেই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দখলের লক্ষ্যে  পশ্চিম পাকিস্তানে আঘাত হানার নির্দেশ  দেবেন ইন্দিরা গাঁধী। তত্কালীন মার্কিন সরকারের এমনই ধারণা ছিল বলে সদ্য প্রকাশিত মার্কিন নথিতে দাবি করা হয়েছে।

ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনে সে সময় হওয়া নানা উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের খুঁটিনাটি তথ্য ও মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, ভারত তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শক্তি গুঁড়িয়ে চুরমার করে দিলে কী করা হবে, সে ব্যাপারে মার্কিন সরকার তার স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত করছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযানের জেরে ভারত-পাক সম্পর্ক খারাপ হতে থাকায় নানা সম্ভাবনার ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি এ কিসিঞ্জারের। যদিও ভারতের পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলে মনে করতেন ওয়াশিংটনের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা সংক্রান্ত অফিসারই।

গত  সপ্তাহেই প্রকাশিত হওয়া সিআইএ-র এক কোটির বেশি গোপন নথির মধ্যে থাকা কাগজপত্র অনুযায়ী, ওয়াশিংটনে স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একাধিক বৈঠকের একটিতে তত্কালীন সিআইএ ডিরেক্টর রিচার্ড হোমস বলেন, শোনা যাচ্ছে, চলতি বৈরিতা, বিরোধের অবসান ঘটানোর আগে পাকিস্তানের সামরিক ও বায়ুসেনার ক্ষমতা চূর্ণ  করে দিতে চান শ্রীমতী  গাঁধী।

ওই নথিতে আরও প্রকাশ, নিক্সন ভারতকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে নামলে আর্থিক  সাহায্য বন্ধ  করে  দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, কিন্তু কী  করে তা বাস্তবায়িত হবে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণাই ছিল না মার্কিন প্রশাসনের। ১৯৭১-এর ১৭ আগস্ট শীর্ষ প্রতিরক্ষা ও সিআইএ অফিসারদের এক বৈঠকে কিসিঙ্গার  বলেন, প্রেসিডেন্ট ও বিদেশ সচিব, দুজনেই ভারতকে এই বলে সাবধান করে দিয়েছেন যে, যুদ্ধ লাগলে আমরা আর্থিক সাহায্য ছেঁটে দেব। কিন্তু এর মানে কি আমরা জানি? অর্থ সাহায্য ছাঁটাইয়ের কী প্রতিক্রিয়া, ফল হতে পারে বা কীভাবে সেই ছাঁটাই হবে, তা কেউই ভেবে দেখেনি।

পাশাপাশি প্রকাশিত নথি থেকে আরও  জানা গিয়েছে যে, ভারতীয়, পাকিস্তানি, চিনাদের কতটা ক্ষমতা, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সূত্রে তেমন তথ্য দিতে না পারায় সিআইএ-র ওপর অসন্তষ্ট হয়ে উঠেছিলেন তত্কালীন জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা কিসিঙ্গার।