নয়াদিল্লি:  গত ৮ নভেম্বর সবাইকে হতচকিত করে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪-য় ক্ষমতায় আসার পর মোদীর এটিই সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ। সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে আগে থেকে জানতেন হাতেগোনা কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত আমলা হাসমুখ আধিয়া। তিনি আর্থিক মহলের বাইরে একেবারেই অচেনা। আধিয়া ছাড়াও আরও পাঁচ জন আমলা এ ব্যাপারে আধিয়ার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা তাঁরা সম্পূর্ণ গোপন রাখার শপথ নিয়েছিলেন। ওয়াকিবহাল মহল সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে একথা জানিয়েছেন সংবাদসংস্থা।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, আধিয়া ও আরও পাঁচ জনকে পরিকল্পনা রূপায়নে সাহায্য করেছিলেন একদল তরুণ গবেষক। তাঁরা নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দুটি কক্ষে দিনরাত কাজ করেন।

সম্ভাব্য সমস্ত ঝুঁকি সত্ত্বেও নোট বাতিলের এই গুরুত্বপূ্র্ণ সিদ্ধান্ত ঝটিতে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।  নোট বাতিলের পর এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নানা মহলে নানা মতামত দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে আরও টাকা আসবে এবং এর ফলে কর বাবদ রাজস্ব বাড়বে। যদিও হঠাত্ করে নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ব্যাঙ্ক ও এটিএম থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পেরে নাজেহাল আম আদমি। পুরানো নোট জমা দিতে ও নতুন নোট তুলতে ভিড় জমেছে ব্যাঙ্কগুলিতে।

আগামী বছরের গোড়াতেই দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। এই ভোটেই হয়ত ইঙ্গিত মিলবে দ্বিতীয়বার মোদী ক্ষমতায় ফিরবেন কিনা। নোট বাতিলের ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির উপকার হবে বলে সরকারি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে। যদিও নোট বাতিলের সাময়িক ধাক্কায় জেরবার সাধারণ মানুষের কাছে এই 'প্রত্যাশিত' সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে হাতে সময় খুবই কম। তাই বলা যেতেই পারে, মোদী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর নিজের জনপ্রিয়তার ওপরই বাজি ধরেছেন। ৮ নভেম্বর সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদী বলেছিলেন, 'আমিই সমস্ত গবেষণা করেছি এবং এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে তার দায়ও আমার'। বৈঠকে উপস্থিত তিন মন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন।

পর্দার আড়ালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঘাঁটি গেড়ে থেকে নোট বাতিলের এই পরিকল্পনার পিছনে যে দলটি কাজ করছিল, তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন আধিয়া। তিনি অর্থমন্ত্রকের এক পদস্থ আধিকারিক।

মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ২০০৩-০৬ পর্যন্ত তাঁর মুখ্যসচিব ছিলেন ৫৮ বছরের আধিয়া। এই সময় থেকেই দুজনের মধ্যে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়। সহকর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত সত্ ও দায়িত্বপরায়ণ বলে পরিচিত আধিয়া। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে রাজস্ব সচিব হন তিনি। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দফতরে কাজ করলেও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি যোগাযোগ সর্বদাই রয়েছে। দেখা হলে দুজনে মাতৃভাষা গুজরাতিতেই কথাবার্তা বলেন।

৮ নভেম্বরের ঘোষণার পরই আধিয়া ট্যুইটা বার্তা পাঠান। এতে তিনি বলেন, কালো টাকার রাশ টানতে এটা খুবই বড়সড় ও সাহসী পদক্ষেপ।