মুম্বই: এ যেন সিনেমার টানটান চিত্রনাট্য। ঠিক হলিউডের থ্রিলার ‘গন গার্ল’-এর মতো। স্বামীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে নিজের অপহরণের নাটক সাজালেন মুম্বইয়ের মীরা রোডের বাসিন্দা এক মহিলা। আর এই নাটকের জট খুলতে পুলিশকে ২৪ ঘন্টা হিমশিম খেতে হল।
নাটকের শুরু গত রবিবার। মুম্বই পুলিশের ছয় সদস্যর দল ৩৫ বছরের দুই সন্তানের জননীকে ‘উদ্ধার’ করতে প্রায় বিনিদ্র রাত কাটাল। শেষপর্যন্ত সোমবার মীরা রোড স্টেশন থেকে সোমবার ওই মহিলাকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ।
বিজয় পার্কে সাত ও পাঁচ বছরের দুই সন্তান ও স্বামীর সঙ্গে থাকেন ওই মহিলা। ওই দম্পতি স্কুলছাত্রদের একটি কোচিং সেন্টার চালান। সেখানে স্বামী-স্ত্রীও শিক্ষকতা করেন। দশ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল।
রবিবার দুপুর একটা নাগাদ কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোন ওই মহিলা। কয়েক ঘন্টা পরেই মোবাইলে হোয়াটস্যাপে একটি মেসেজ পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁর স্বামী। এক পুরুষের হোয়াটস্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজে জানানো হয় যে, তাঁর স্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে।মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়।  আর একটি মেসেজে একটি ছবি পাঠানো হয়। ছবিতে দেখা যায়, ওই মহিলা অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন, তাঁর মুখও বাঁধা। তড়িঘড়ি ওই মহিলার স্বামী পুলিশের দ্বারস্থ হন। কাশিমিরা থানায় অপহরণ ও তোলাবাজির মামলা দায়ের করা হয়।
মহিলাকে উদ্ধারের জন্য ছয় সদস্যের দল গঠন করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের আধিকারিক।
তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যস্ত রাস্তা থেকে কাউকে অপহরণ করা হয়েছে, এমন কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পায়নি। শেষপর্যন্ত সোমবার মীরা রোড স্টেশনে ওই মহিলাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সোমবার সন্ধের মধ্যেই পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওই মহিলা অপহরণের নাটক ফেঁদেছিলেন। জানা যায়, ওই মহিলা ট্রেনে করে জলগাঁও জেলের ভুসাবল পর্যন্ত গিয়েছিলেন। ট্রেনেই রাত কাটিয়েছেন তিনি।
ওই মহিলার সেলফোনের টাওয়ার লোকেশনও ট্রেনের স্টেশনগুলিতে পাওয়া গিয়েছে। সেই অনুসারে সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলিকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়। মীরা রোড স্টেশনের ক্লোজ সার্কিট টিভিতেও নজরদারি চালানো হচ্ছিল। কাশিমিরা থানার ইন্সপেক্টর বিলাস সানাপ একথা জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে মীরা রোড স্টেশনে ওই মহিলার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। ফুটেজে ওই মহিলার গতিবিধি ধরা পড়ে। শেষপর্যন্ত অন্য একটি ট্রেনে ওঠার আগে ওই মহিলাকে ধরে ফেলে পুলিশ।
ওই মহিলা অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন। টেলিভিশনে একটি সিরিয়াল দেখে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
কিছুদিন আগেও ওই মহিলা অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার তুলেছিলেন। স্বামী জিজ্ঞাসা করায় তিনি ছেলেকে অপহরণের  গল্প ফেঁদেছিলেন। সেকথা অবশ্য স্বামী প্রথমে পুলিশকে জানাননি।
ওই মহিলার দাবি, স্বামী তাঁকে কোচিং সেন্টারের লভ্যাংশ দেন না। এজন্য টাকা আদায়ের জন্য অপহরণের নাটক করেছিলেন তিনি। স্বামী কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় মঙ্গলবার পুলিশ ওই মহিলাকে ছেড়ে দেয়। তবে পুলিশ ওই মহিলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে বলে জানা গেছে।