নয়াদিল্লি: পৌনে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা যাচ্ছে, চড়া রোদে মধ্যবয়সী এক পুরুষকে কাঁধে তুলে হাঁটছেন এক যুবতী। আপাতভাবে মনে হবে বুঝি অসুস্থ স্বামীকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী। কিন্তু আশপাশের লোকজনকে দেখলে ব্যাপারটি খানিক পরিষ্কার হবে। স্বামীকে কোলে তুলে নিতে যথেষ্টই কষ্ট হচ্ছে তরুণীর। তিনি কোনওমতে পা টেনে টেনে হাঁটছেন। কিন্তু থামলেই গালিগালাজ ভেসে আসছে পাশ থেকে। মারা হচ্ছে কাঠের কঞ্চি দিয়ে। সকলে রীতিমতো মজা করছে! ব্যাপারটা কী? জানা যাচ্ছে, পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে বিবাহিত মহিলাকে এ ভাবেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গ্রামীণ প্রশাসনের তরফে। স্বামীকে কাঁধে নিয়ে গোটা গ্রামের রাস্তা ঘুরতে হচ্ছে ওই মহিলাকে। থামলেই শুনতে হচ্ছে অশ্রাব্য গালিগালাজ। মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলার ছাপড়ি রনওয়াস গ্রামের ঘটনা।

জানা যাচ্ছে, মহিলার স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রী পরপুরুষে আসক্ত। এর বিচার না করে ঘরে তিনি কিছুতেই ঘরে তুলবেন না বৌকে। বিবাদের গন্ধ পেয়ে এসে পড়েছেন গাঁয়ের মোড়ল। সঙ্গে সাঙ্গপাঙ্গ ও মাতব্বরেরা। মজা দেখতে হাজির গোটা গ্রাম। বাচ্চা, বুড়ো, মেয়ে, বৌ সবাই এসেছে।

‘বিচারকমন্ডলী’ রায় দিল, স্বামীকে কাঁধে চাপিয়ে স্ত্রীকে ঘুরতে হবে গোটা গ্রাম। এটাই 'পরকীয়া'র শাস্তি। ঘটনার ভিডিয়ো করে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে শেয়ারও করে দিয়েছে অনেকে। সেটি ভাইরাল হওয়ার পর নজরে আসে পুলিশের। ঝাবুয়া কোতয়ালি থানার অন্তর্গত মধ্যপ্রদেশের ওই গ্রাম থেকে এই ঘটনায় মহিলার স্বামী-সহ সাত জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার স্টেশন ইনচার্জ নরেন্দ্র সিং গাদারিয়া। তিনি জানান ওই মহিলা তিন সন্তানের মা। পাশের রাজ্য গুজরাতে দিনমজুরি করতে গিয়েছিল ওই দম্পতি। সেখানেই অন্য এক মজুরের সঙ্গে স্ত্রী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তোলে মহিলার স্বামী। আর তারপরই গ্রামের সালিশি সভা বসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক চন্দ্রভান সিং ভাদোরিয়া জানাচ্ছেন, মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া, আলিরাজপুর, ধর জেলাগুলিতে মহিলাদের উপর এমন পারিবারিক ও গ্রামীণ অত্যাচারের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। নানা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, ভুয়ো অভিযোগ তুলে মহিলাদের উপর নিপীড়ন অনেক দিনই চলছে।যদিও এসব ঘটনা কোনও সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ করা নেই। বিধায়ক, সাংসদরা খুব ভালো করেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পাছে ভোট কমে যায়, তাই এসব জানলেও তার মধ্যে মাথা গলাতে চান না জনপ্রতিনিধিরা।