বেঙ্গালুরু: পুরো নাম বুকানাকেরে সিদ্দালিঙ্গাপ্পা ইয়েদুরাপ্পা। ১৫ বছর বয়সে যোগ দেন আরএসএস-এ। স্বংয়সেবক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পরে সাতের দশকে জনসঙ্ঘতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সরকারি কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন। একটি হার্ডঅ্যয়ারের দোকানও চালাতেন। সেখান থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢুকে পড়ে তিন-তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া কতটা কঠিন ছিল, সেটা তিনিই জানেন। বিতর্ক তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবে অতীতের মতোই এবারও বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে আজ তৃতীয়বার কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করলেন ইয়েদুরাপ্পা।
৭৫ বছর বয়সি এই রাজনৈতিক নেতা প্রথমবার বিধায়ক হন ১৯৮৩ সালে। শিকারিপুরা কেন্দ্র থেকে মোট ৬বার বিধায়ক হয়েছেন তিনি। এই লিঙ্গায়ত নেতা বরাবরই কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা, দাবি নিয়ে সরব। কর্ণাটকে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বারবার সেকথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইয়েদুরাপ্পা কলা বিভাগে স্নাতক। জরুরি অবস্থার সময় তিনি জেল খেটেছিলেন। তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ দফতরের কেরানি ছিলেন। পরে একটি চাল কলেও কেরানি হিসেবে কাজ করেন। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি নিজেই একটি হার্ডঅ্যয়ারের দোকান খোলেন। তবে সামান্য চাকরি বা ব্যবসা তাঁর জন্য ছিল না। তাই সেসব ছেড়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান।
২০০৪ থেকে ইয়েদুরাপ্পার রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়। সেবার কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পায় বিজেপি। তবে কংগ্রেস ও জেডিএস-এর জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী হন ধরম সিংহ। তবে ২০০৬ সালে খনি দুর্নীতিতে ধরমকে অভিযুক্ত করে লোকায়ুক্ত। এরপরেই জেডিএস নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার ছেলে এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার ফেলে দেন ইয়েদুরাপ্পা। তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী এবং কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০০৭-এর নভেম্বরে ইয়েদুরাপ্পা প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু সাতদিনের বেশি টেকেনি সেই সরকার। কারণ, ক্ষমতা বণ্টন নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান কুমারস্বামী। ২০০৮-এর মে-তে ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পায় বিজেপি। তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে তৎকালীন লোকায়ুক্ত এন সন্তোষ হেগড়ে বেআইনি খনি কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত করায় ২০১১ সালের ৩১ জুলাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ইয়েদুরাপ্পা। ১৫ অক্টোবর তিনি লোকায়ুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে এক সপ্তাহ জেলেও থাকতে হয়।
ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়ার পর দল ছাড়েন ইয়েদুরাপ্পা। তিনি কর্ণাটক জনতা পক্ষ নামে নিজের দল গড়েন। এই দল কর্ণাটকের রাজনীতিতে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও, ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৬টি আসন ও প্রায় ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি-র ক্ষমতা ধরে রাখার সম্ভাবনা নষ্ট করে দেন। যদিও এরপরেই ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি দল নিয়ে ফের বিজেপি-তে যোগ দেন ইয়েদুরাপ্পা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটক থেকে বিজেপি ২৮-এর মধ্যে ১৯টি আসনেই জয়ী হয়। ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর সিবিআই আদালত ৪০ কোটি টাকার বেআইনি খনি দুর্নীতি মামলায় ইয়েদুরাপ্পা, তাঁর দুই ছেলে ও জামাইকে রেহাই দেয়। কর্ণাটক হাইকোর্টও লোকায়ুক্তর দায়ের করা ১৫টি এফআইআর বাতিল করে দেয়। ফলে স্বস্তি পেয়ে দলে নিজের জায়গা আরও পাকাপোক্ত করেন ইয়েদুরাপ্পা।
বিতর্ক নিত্যসঙ্গী, সরকারি কেরানি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে চমকপ্রদ উত্থান ইয়েদুরাপ্পার
Web Desk, ABP Ananda
Updated at:
17 May 2018 08:20 PM (IST)
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -