লখনউ: উত্তরপ্রদেশে আসন্ন পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনই যোগী আদিত্যনাথের প্রথম কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে। তাঁর ও বিজেপি-র জনপ্রিয়তা একইরকম আছে কি না, তার প্রমাণ মিলতে পারে এই নির্বাচনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের মানুষের মনের ভাবেরও আঁচ পাওয়া যেতে পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচনের মাধ্যমে। ফলে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডাকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে তিন-চতুর্থাংশ আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। ৪৫ বছর বয়সি আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এবার পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচন তাঁর কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার লড়াই। নভেম্বর-ডিসেম্বর হবে এই নির্বাচন। এ মাসের শেষেই নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। এ বছরের জুন-জুলাইয়েই উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় এই নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়।

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মঞ্জুলা উপাধ্যায় বলেছেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপি নিজেদের দল ও সরকারের কাজকর্ম ও নীতির ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের সুযোগ পাবে।’

সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক রাজপাল কাশ্যপ বলেছেন, ‘যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম সরাসরি কোনও নির্বাচনের মোকাবিলা করবেন। স্থানীয় ইস্যুর ভিত্তিতেই স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন হয়। পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেন মানুষ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ জন-বিরোধী বিজেপি সরকারের প্রতি নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারবেন।’

এই নির্বাচনে অবশ্য বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সুযোগ পুরোমাত্রায় পেতে পারে বিজেপি। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি জোট বেঁধে লড়াই করলেও, এবার দু’দল আলাদা লড়াই করবে। সপা প্রধান অখিলেশ যাদব জানিয়ে দিয়েছেন, পুর ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁরা কোনও দলের সঙ্গে জোট গড়বেন না। সপা-র সব প্রার্থীই সাইকেল চিহ্ন নিয়ে লড়াই করবেন। সপা মুখপাত্র সুনীল সিংহ সজন বলেছেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা জোট করেছিলাম। তার মানে এই নয় যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও আমরা জোট করব।’ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদও বলে দিয়েছেন, তাঁরা আসন্ন নির্বাচনে আলাদা লড়বেন। মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিও আলাদা লড়াই করবে। আম আদমি পার্টিও এই নির্বাচনে লড়াই করবে। দলীয় নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেছেন, ‘আমাদের যেখানে সাংগঠনিক শক্তি আছে বলে মনে হবে, সেখানেই আমরা প্রার্থী দেব।’ লখনউ পুরসভা নির্বাচনে ১৯ জন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে আম আদমি পার্টি।

বিরোধী দলগুলি আলাদাভাবে লড়াই করার কথা বলায় বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার আশায় উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। বিজেপি মুখপাত্র শালাভমণি ত্রিপাঠি বলেছেন, ‘বিজেপি বিকাশপর্ব শুরু করেছে। গত সাড়ে তিন বছরে কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা তুলে ধরা হচ্ছে। গত ৬ মাসে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের বিষয়েও মানুষকে অবহিত করা হচ্ছে।’ অখিলেশ অবশ্য বলছেন, এই নির্বাচনে তাঁরা ভাল ফল করতে পারলে শুধু ২০১৯-ই নয়, ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের জন্যও ভাল বার্তা যাবে।