পটনা: বিহার ভোটের আগে বিজেপি একাধিকবার প্রকাশ্যে জানিয়েছে, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই এবারের ভোটে লড়ছে তারা। চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপির সঙ্গে নীতীশের ঝগড়ার পরেও তারা জেডিইউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে চিরাগকে ধমকধামক দিয়েছে। কিন্তু তখন নীতীশ ছিলেন বড় শরিক, বিজেপি অধমর্ণ। কিন্তু বিহার ভোটের ফল যেদিকে যাচ্ছে, তাতে পরিষ্কার হিসেব পালটাচ্ছে। জেডিইউকে পিছনে ফেলে রাজ্যে এনডিএর বৃহত্তম দল হচ্ছে বিজেপি। এখন প্রশ্ন, নতুন পরিস্থিতিতে নীতীশই কি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, নাকি বিজেপি তাদের দাবি পেশ করবে?

নীতীশ আগেই জানিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ ভোট। এক সঙ্গে বলেছেন, সব ভাল যার শেষ ভাল। কথা হল, নীতীশের শেষটা কি সত্যিই তেমন ভাল হতে চলেছে? বিজেপি যদি বিহারে এনডিএর বড় শরিক হয়, তবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবি কি তারা মানবে? ভোট গণনা যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, জেডিইউ পঞ্চাশের আশেপাশে থেমে যাবে, বিজেপি পার হতে পারে পঁচাত্তর। এই পরিস্থিতিতে ছোট শরিকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবি তারা কি আদৌ মানবে?

২০১৩ সালে ১৭ বছরের জোট ভেঙে এনডিএ ছেড়েছিল জেডিইউ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই তখন বলেছিলেন, বিহারে যেভাবে বিজেপি এতদিন  নীতীশকে এগিয়ে দিয়ে নিজেরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাকফুটে থেকেছে, তাতে রাজ্যে দলের সম্ভাবনার পায়ে নিজেরাই কুঠারাঘাত করেছে তারা। এখন জেডিইউয়ের হাত ছেড়ে তারা স্বাধীনভাবে এগোবে, আর জোটের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে জেডিইউ আরজেডির হাত ধরে, বিজেপি ছিল এলজেপির সঙ্গে। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যায়, বিজেপি জোট পিছিয়ে পড়েছে, ক্ষমতায় আসে জেডিইউ-আরজেডি জোট। কিন্তু ২ বছরের মাথায় আরজেডির হাত ছেড়ে ফের এনডিএতে ফিরে আসেন নীতীশ।

তখন থেকে বিহারের এনডিএতে নীতীশই শেষ কথা। তাঁর দাবি মেনে রাজ্যে পুরনো শরিক এলজেপির হাত ছেড়েছে বিজেপি। প্রকাশ্যে চিরাগ পাসওয়ানকে বকাঝকাও করেছে। কিন্তু নীতীশ ও তাঁর সঙ্গীদের সন্দেহ ছিল, বিজেপি এ সব ওপর ওপর করছে, ভেতরে চিরাগকে মদত দিচ্ছে তারা, যাতে তিনি নীতীশের ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে পারেন, জেডিইউ যাতে ছোট শরিকে পর্যবসিত হয়, বিজেপি যাতে তাঁর ওপর জোর ফলাতে পারে। এবারের ভোটের ফল বলছে, নীতীশ পিছিয়ে পড়েছেন, বিহারে সব থেকে বড় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি।

কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাৎপর্যপূর্ণভাবে ইতিমধ্যেই বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি তাঁদের ভোটে জিতিয়েছে। সন্ধের মধ্যে তাঁরা সরকার গড়া ও সরকারে কে নেতৃত্ব দেবেন তা ঠিক করবেন। তবে নতুন কাউকে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভাবছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিজেপি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে, নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়াল বলেছেন একই কথা।

প্রায় এমনই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল মহারাষ্ট্র ভোটের সময়। এনডিএ জোটে বড় শরিক বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছাড়তে চায়নি শিবসেনা, তারা মুখ্যমন্ত্রী পদে রোটেশন চেয়েছিল। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চায়নি। এই নিয়ে ঝামেলার জেরে বিজেপির সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনা শেষ পর্যন্ত এনডিএ ছেড়ে যায়। ইউপিএতে ঢুকে এনসিপি-কংগ্রেসের হাত ধরে সরকার গড়েছে তারা। বিহারের কিসসা কুর্সি কা সেদিকে এগোবে কিনা সেদিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।