নয়াদিল্লি: একদিকে চিন, অন্য দিকে ভারত। মধ্যিখানে ছবির মতো সাজানো একটুকরো দেশ। চারিদিক ঘেরা পাহাড়-পর্বত, সমতল দিয়ে। তাতেই প্রায়শ বিপদের মুখে পড়তে হয় নেপালকে। রবিবার ফের বিপর্যয় নেমে এল সেখানে। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী একটি বিমান সেখানে ভেঙে পড়ল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। বাকিদেরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নেপালে এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পার্বত্য ভূমি, প্রতিকূল আবহাওয়া, মান্ধাতা আমলের উড়ান পরিকাঠামো এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণকেই তার জন্য দায়ী করা হয়। বিগত ৩০ বছরে নেপালে কমপক্ষে ২৭টি এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনার টাইমলাইন
মে, ২০২২
তারা এয়ারলাইন্সের বিমান ২২ জন যাত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়ে। তাতে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন চার জন। ২৯ মে মাস্তাঙ্গ জেলার দুর্গম এলাকায় ভেঙে পড়ে বিমানটি। তিন দিন পর মৃতদের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। খারাপ আবহাওয়ার জন্যই বিমানটি ভেঙে পড়ে বলে উঠে আসে তদন্তে।
ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
মেঘলা দিনে বেরিয়ে বিপাকে পড়ে এয়ার ডাইন্যাস্টির একটি হেলিকপ্টার। মাঝ আকাশ থেকে কাঠমাণ্ডু ফিরে আসার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু ফেরা হয়নি। নেপালের তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারী-সহ সাত জনকে নিয়ে ভেঙে পড়ে কপ্টারটি। জ্বালানির ট্যাঙ্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ভাবে যাত্রী তোলা হয় এবং তাঁদের বসার ব্যবস্থাতেও গড়বড় ছিল, সেই কারণেই বিমানটি ভেঙে পড়ে বলে জানা যায়।
মার্চ, ২০১৮
১০১৮ সালের ১২ মার্চ US-Bangla এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ৬৭ জন যাত্রী এবং চার জন বিমানকর্মীকে নিয়ে ভেঙে পড়ে। কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরেই ভেঙে পড়ে বিমানটি। ঢাকা থেকে ফিরছিল বিমানটি। অবতরণের সময় আগুন ধরে যায়। পাশের ফুটবল মাঠে বিস্ফোরণ ঘটে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
এয়ার কাষ্ঠমণ্ডপের একটি বিমান ১১ জন যাত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়ে। কালিকোট জেলায় ভেঙে পড়ে বিমানটি। তাতে দুই বিমানকর্মী মারা যান। গুরুতর আহত হন ন’জন।
মে, ২০১৫
আমেরিকার মেরিন কর্পের একটি হেলিকপ্টার চারিকোট এলাকায় ভেঙে পড়ে। আট যাত্রীরই মৃত্যু হয়। তাতে আমেরিকার ছয় জন সেনা এবং নেপালের দুই সেনার মৃত্যু হয়। ভূমিকম্প দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
মে, ১০১২
২১ জন যাত্রীক নিয়ে ভেঙে পড়ে একটি ডর্নিয়ের বিমান। পাহাড়ের একেবারে শিখরে ভেঙে পড়ে বিমানটি। তাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ভারতীয় পুণ্যার্থী। পোখরা থেকে জমসন বিমানবন্দর যাচ্ছিল বিমানটি। পাহাড়ের উপর অবস্থিত বিমানবন্দরে নামার সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
সেপ্টেম্বর, ২০১১
মাউন্ট এভারেস্ট ঘুরিয়ে দেখাতে ১৯ জন যাত্রীকে নিয়ে উড়েছিল বুদ্ধার এয়ারের বিচক্র্যাফ্ট ১৯০০ডি বিমানটি। একটি পর্বতের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ১০ ভারতীয় ছিলেন নিহত যাত্রীদের মধ্যে। খারাপ আবহাওয়ার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
সেপ্টেম্বর, ২০০৬
শ্রী এয়ারের একটি বিমান অন্য একটি চার্টার্ড বিমানের উপর ভেঙে পড়ে। ২৪ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরিবেশ সংরক্ষণে ত্রাণ জোগাড়ে বেরিয়েছিল বিমানটি।
জুন, ২০০৬
ইয়েতি এয়ারলাইন্সেরই একটি বিমান খোলা মাঠে ভেঙে পড়ে। ছয় যাত্রী মারা যান তাতে।
নভেম্বর, ২০০১
পশ্চিম নেপালে ভেঙে পড়ে চার্টার্ড হেলিকপ্টার। তাতে সওয়ার ছিলেন রাজকুমারী প্রেক্ষা শাহও। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁরও।
জুলাই, ২০০০
রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ধাঙ্গাড়ি যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ে। ২২ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।
জুলাই, ১৯৯৩
এভারেস্ট এয়ারের একটি ডর্নিয়ার বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। চুলে ঘোপতে পর্বতের কাছে ভেঙে পড়ে বিমানটি। সব বিমানকর্মী এবং ১৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়।
সেপ্টেম্বর, ১৯৯২
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারবাস কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দের অবতরণের সময় ভেঙে পড়ে। তাতে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়।
জুলাই, ১৯৯২
তাই এয়ারওয়েজের এয়ারবাস ৩১০ কাঠমাণ্ডুতে ঢোকার মুখে ভেঙে পড়ে। তাতে মৃত্যু হয় ৯৯ জন যাত্রী এবং ১৪ জন বিমানকর্মীর। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ার সময় কাঠমাণ্ডুর ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে একটি পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বিমানটির।