নয়াদিল্লি: বিশ্বায়নের যুগে সকলে যখন তথ্যপ্রযুক্তি, যন্ত্রমেধার দিকে ঝুঁকছেন, সেই সময় কৃষিকার্যকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কৃষি নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে বিদেশ রওনা দেন নেপালের বাসিন্দা, ২৫ বছর বয়সি বিপিন জোশী। কিন্তু বিদেশ থেকে আর ফেরা হল না তাঁর। নেপালের বাড়িতে ফিরছে তাঁর মৃতদেহ। ইজরায়েল বনাম হামাসের যুদ্ধে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন ওই তরুণ।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করতে ইজরায়েল রওনা দেন বিপিন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে, ৭ অক্টোবর ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সংগঠন, হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। Learn and Earn প্রকল্পের আওতায় সেই সময় দক্ষিণ ইজরায়েলের কিবুৎজে গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন বিপিন।
যে খামারে গবেষণার কাজ করছিলেন বিপিন এবং তাঁর টিমের সদস্যরা, সেখানে হামাসের তরফে অভিযান চালানো হলে ১০ নেপালি নাগরিক মারা যান বলে জানা যায়। আহত বন পাঁচ জন। বিপিন এবং তাইল্যান্ডের নাগরিক এক তরুণীকে হামাস অপহরণ করে নিয়ে যায়। পণবন্দি করে রাখা হয় তাঁদের।
সেই থেকে গত ৭৩৮ দিন ধরে বিপিনের কোনও খোঁজ পাননি নেপালে তাঁর পরিবারের লোকজন। ঘরের ছেলের খবর পেতে ইজরায়েলও যান তাঁরা। জানা যায়, হামলার সময় পালানোর চেষ্টা করেন বিপিন। একটি ঘরে আশ্রয় নেন। সেখানে গ্রেনেড এসে পড়লে, তা কুড়িয়ে বাইরে ছুড়েও দেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হামাস তাঁকে পণবন্দি করে। ২০২৩ সালে গাজার একটি হাসপাতালের ফুটেজ সামনে আসে, যেখানে বিপিনের মতো দেখতে একজনকে দেখা যায়। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে একটি ভিডিও-য় ৩৩ সেকেন্ডের জন্য দেখা যায় বিপিনকে। ইংরেজিতে নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমার নাম বিপিন জোশী। নেপালের বাসিন্দা আমি। বয়স ২৩ বছর। ২৫ দিন আগে ইজরায়েল এসেছিলাম। আমি পড়ুয়া। লেবু চাষ শিখতে খামারে কাজ করি।” কিন্তু বিপিন কোথায় আছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি ইজরায়েল এবং হামাস শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয়। সেই মতো আওতায় বন্দি বিনিময়ে, দেহ হস্তান্তরে রাজি হয় দুই দেশ। সেই সোমবার চার মৃত পণবন্দির দেহ ইজরায়েলের হাতে তুলে দেয় হামাস, যার মধ্যে বিপিনের দেহও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্য যে তিন জনের দেহ ফিরিয়ে দেয় হামাস, তাঁরা হলেন, গায় ইলুজ, ইয়োশি শরাবি, ড্যানিয়েল পেরেৎজ।
মঙ্গলবার ইজরায়েল বিদেশমন্ত্রকের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়, ‘বিপিন জোশীর মৃত্যুর খবর অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। ৭৩৮ দিন হামাসের হাতে পণবন্দি থাকার পর ওঁর দেহ গতকাল ইজরায়েলে ফেরত আনা হয়েছে। ২৫ বছর বয়সি বিপিন নেপালের পড়ুয়া। ৭ অক্টোবর কিবুৎজ থেকে অপহরণ করা হয় তাঁকে। তিন সপ্তাহ আগে ইজরায়েল এসেছিলেন তিনি। কিবুৎজের জীবনযাত্রা ভালবেসে ফেলেছিলেন। কৃষিবিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলেন বিপিন, ব়্যাপারও ছিলেন। দুই চোখে স্বপ্ন ছিল, আনন্দ ছিল। নৃশংস ভাবে ওঁর জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, হামাস জঙ্গিরা মেরে ফেলেছে ওঁকে। ৭৩৮ দিন পর বাড়ি ফিরছেন বিপিন, যাতে সঠিক ভাবে শেষকৃত্য হয় তাঁর। জোশী পরিবারের এই যন্ত্রণার অংশীদার আমরা। বিপিনের স্মৃতি আশীর্বাদ হয়ে থাকুক’।
সোমবার ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের আওতায় ২০ জন পণবন্দিকে জীবিত অবস্থায় হস্তান্তর করেছে হামাস। দু’বছর ধরে হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন তাঁরা। ফিরিয়ে দেওয়া হয় চার নিহতের দেহও। মৃত অনেকের দেহ এখনও হস্তান্তর করা যায়নি। হামাসের দাবি, কোথায় সমাধিস্থ করা হয়েছে তাঁদের, তা বের করে বাকি দেহগুলিও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এর পরিবর্তে প্রায় ২০০০ প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্তি দেয় ইজরায়েল। গত দু’বছরে ইজরায়েলের হাতে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ প্যালিস্তিনীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।