নয়াদিল্লি: দেশের অন্দরে নাগরিকদের ঠিকানা নির্ধারণে এবার নয়া ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ভারতীয় ডাকের (Indian Post) তরফে নয়া প্রকল্পের সূচনা করা হল। ছয় সংখ্য়ার এলাকাভিত্তিক পিন কোডের (PIN) পাশাপাশি, এবার ডিজিটাল পিন (DIGIPIN) চালুর উদ্দেশে এমন পদক্ষেপ। এব্যাপারে  সকলের মতামত চাওয়া হয়েছে। ভারতীয় ডাক জানিয়েছে, ঠিকানার ডিজিটালকরণে এই পদক্ষেপ বিপ্লব আনতে চলেছে ভারতে। (What is DIGIPIN)

সরকারি নথি থেকে অনলাইন জিনিস কেনাকাটা, সবেতেই পিন কোড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ছয় অক্ষরের পিন কোড দ্বারা একটি বিরাট বড় এলাকাকে বোঝানো হয়। ফলে শুধুমাত্র পিন কোড দেখে কোনও ব্যক্তি বা নির্মাণের ঠিকানা সুনির্দিষ্ট ভাবে বোঝা যায় না। সেই সমস্যা দূর করতেই DIGIPIN চালু করার ভাবনা ভারতীয় ডাকের। (Digital Addressing System)

DIGIPIN চালু হলে অনলাইন কেনাকাটা, বাড়ি বাড়ি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, অ্যাম্বুল্যান্স, দমকলের মতো জরুরি পরিষেবা প্রদান আরও সহজ ও দ্রুততর হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

সাধারণ মানুষ নিজের জন্য পৃথক DIGIPIN পেতে পারেন। এর জন্য ভারতীয় ডাকের দেওয়া ওয়েবসাইট https://dac.indiapost.gov.in/mydigipin/home-এ যেতে হবে। নিজের বাড়ি শনাক্ত করে সেখান থেকে ১০ সংখ্যার DIGIPIN সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ, যা তাঁর সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল ঠিকানা হয়ে উঠবে। ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে আর ভুলভ্রান্তি হবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনও উপকৃত হবেন বলে আশাবাদী সরকার।

নিজ নিজ DIGIPIN থাকার সুবিধা অনেক বলে জানিয়েছে ভারতীয় ডাক। বলা হয়েছে—

১) প্রতি ৪ বর্গ মিটার এলাকার মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানা শনাক্ত করা যাবে।

২) পণ্য পৌঁছে দেওয়া বা জরুরি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সহজতর হয়ে উঠবে।

৩) ঠিকানা বোঝার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যবস্থার যে অভাব রয়েছে, তা এতে ঘুচবে। 

৪) নির্দিষ্ট DIGIPIN পাওয়ার দরুণ ব্যক্তিগত তথ্য হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি নেই। গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।

ভারতীয় ডাক জানিয়েছে, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের নিরিখে কোনও ভৌগলিক অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঠিকানা সঠিক ভাবে নির্ধারণের প্রযুক্তিই DIGICODE. ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO এবং IIT হায়দরাবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে ভারতীয় ডাক। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাড়ি, অফিস, বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানকে স্থানাঙ্কের নিরিখে বিভক্ত করে, সেই মতো ১০ সংখ্যার DIGIPIN দেওয়া হবে।

কিন্তু সাধারণ PIN এবং DIGIPIN-এর মধ্যে পার্থক্য কী? 

সাধারণ PIN একটি বড় এলাকার উপর কার্যকর। স্থানাঙ্কের নিরিখে নির্দিষ্ট ঠিকানা বোঝায় DIGIPIN. 

PIN থাকলেও কি DIGIPIN নেওয়া প্রয়োজন?

বড় এলাকায় নির্দিষ্ট ঠিকানা খুঁজতে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়। DIGIPIN একেবারে সঠিক নির্দেশ দেবে। এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে তেমন ল্যান্ডমার্কও নেই, সখানেও গন্তব্যের নির্ভুল অবস্থান বোঝা যাবে। গ্রাম-শহর, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্রেও এই প্রযুক্তি কার্যকর হবে। শুধুমাত্র অনলাইনই DIGIPIN কাজে লাগবে না, অফলাইনও অনেক সুবিধা হবে। 

DIGIPIN নিলে কি PIN পাল্টে যাবে

তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। আগের পিন কোডই থাকবে। ঠিকানা নির্ধারণের যে ব্যবস্থা দেশে, DIGIPIN তাকে আরও নির্ভুল করে তুলতে সহায়ক DIGIPIN. তবে স্থানাঙ্কের নিরিখে যেহেতু নির্ভুল অবস্থান বোঝাবে, তাই PIN-এর ব্যবহার কমতে পারে। প্রত্যন্ত ও অনুন্নত এলাকায় ল্যান্ডমার্কের তেমন বালাই নেই। সেক্ষেত্রেও DIGIPIN গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে।