নয়াদিল্লি: ১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলায় দোষী ঘোষিত ৪ অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাজা কার্যকর করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। তার প্রাক্কালে ২০১২-র দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের চার দোষীর একজন অক্ষয় কুমার সিংহ ক্ষমা প্রার্থনা, সাজার মাত্রা লঘু করার আবেদন জানাল। রিভিউ পিটিশন দাখিল করে অক্ষয়ের সওয়াল, দিল্লির বাতাস, জলে বিষের জেরে তার আয়ু এমনিতেই ফুরিয়ে আসছে, সুতরাং মৃত্যুদণ্ড অর্থহীন। পিটিশনে বেদ, পুরান, উপনিষদের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আমরা বর্তমানে কলিযুগে রয়েছি, যেখানে একজন মানুষের জীবনের মেয়াদ বড়জোর ৫০-৬০ বছর। ৩২ বছরের অক্ষয় রিভিউ পিটিশনে বলেছে, এমনিতেই মেয়াদ জীবনের কমে আসছে, তখন কেন সুপ্রিম কোর্ট সাজা হিসাবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।
বেদ, পুরানের মতো প্রাচীন গ্রন্থের প্রসঙ্গ টেনে সে বলেছে, এক সময় সত্যযুগ ছিল, যখন লোকে দীর্ঘদিন বাঁচত। কিন্তু এখন আর তা হয় না।
দিল্লির বায়ু ও জলদূষণ প্রসঙ্গে সে বলেছে, দিল্লি, এনসিআরে বাতাস, জলের কী হাল, সেটা প্রত্যেকে জানে। জীবন ক্রমশ ছোট হচ্ছে, তখন কেন মৃত্যুদণ্ড?



রাজধানীর বুকে ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বরের শীতের রাতে বাসে ২৩ বছরের ফিজিওথেরাপিস্টের ধর্ষণ ও অত্যাচার চালিয়ে মৃত্যুর জন্য ২০১৩-র ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। প্রথমে দিল্লি হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখে। অক্ষয় তার রিভিউ পিটিশনে সেই রায় পুনরায় খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছে। তার আইনজীবী ডঃ এপি সিংহ বলেছেন, আমরা খোলা আদালতে রিভিউ পিটিশনের শুনানি করার আবেদন করেছি।


মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অক্ষয়ের পিটিশনে সওয়াল করা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড হল আগাম পরিকল্পনামাফিক ন্যয়বিচারের অজুহাতে রাষ্ট্রের হাতে একটি মানুষের রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড। সরকার মানুষের জীবনের জটিল সমস্যাগুলির মূল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে বরং সহজ, সরল উপায় অবলম্বন করছে বলেও অভিমত জানিয়েছে সে।
অক্ষয় সমেত চার দোষীর মৃত্যুদণ্ডই সর্বোচ্চ আদালত ২০১৭-র ৫ মে বহাল রাখে। চারজনের লঘু শাস্তির আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত বলেছিল, তাদের অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতমের পর্যায়ে পড়ছে, যা ‘সমাজের বিবেক কাঁপিয়ে দিয়েছে’। প্রসঙ্গত, চারজনই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছে, যা শীঘ্রই খারিজ হতে চলেছে বলে খবর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাষ্ট্রপতিকে সেই আবেদন খারিজের সুপারিশ করেছে।