নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)সমর্থন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন দাবি করেছেন, এই আইন মুসলিম-বিরোধী নয়। নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে আদনান সামি, তসলিমা নাসরিনের প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত ছ’বছরে পাকিস্তান থেকে আসা ২ হাজার ৮৩৮ জন, আফগানিস্তানের ৯৪৮ জন এবং বাংলাদেশের ১৭২ জন উদ্বাস্তুকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬৬ জন মুসলিম। এ ছাড়া ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চার লক্ষেরও বেশি শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীকেও নাগরিকত্ব দিয়েছে ভারত।
সিএএ নিয়ে নানা প্রশ্নে বিদ্ধ কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনা, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব, সংবিধান বিরোধী— এমন হাজারো অভিযোগে সরব বিরোধী থেকে পড়ুয়া-নোবেলজয়ী থেকে ইতিহাসবিদ। এই পরিস্থিতিতে নানা পরিসংখ্যান, নানা উদাহরণ দিয়ে সমালোচকদের ভুল প্রমাণিত করার চেষ্টা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আর তা করতে গিয়েই বিরোধীদের নতুন প্রশ্নের মুখে তিনি। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন করেছেন, যখন ওই আইন ছিলই, তখন নতুন করে আইন করতে হল কেন? গোটা দেশে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে? আসলে এটা একটা রাজনীতি, দখলের রাজনীতি।
অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞরা পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলছেন, ৪৫ বছরে দেশের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ, বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরলেও তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি নেই। তাঁদেরই অন্যতম, অর্থনীতিবিদ সুমন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, দেশের বর্তমান নাগরিকদের মুখেই যখন পর্যাপ্ত অন্ন কিংবা তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ সরকার, তখন নতুন করে অন্য দেশের নাগরিকদের এ দেশে আনার যৌক্তিকতা কোথায়?
সিএএ-র সমর্থনে মুখ খুলতে গিয়ে রবিবার আরও একবার বিপত্তি বাঁধান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০১৬ থেকে ’১৮ এই দু’বছরে আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা ৩৯১ জন মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে ১৫৯৫ জনকে। এই সময়ের মধ্যেই আদনান সামিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা একটা উদাহরণ। অন্য উদাহরণ তসলিমা নাসরিনকে নাগরিকত্ব দেওয়া। এটাই প্রমাণ করে আমাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে।’’
অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও বিজেপি প্রত্যাশিতভাবেই সিএএ-এর স্বপক্ষে জোরালো সওয়াল করেছে। দলের রাজ্যনেতা শমীক ভট্টাচার্যের যুক্তি, যাঁরা নিপীড়িত, তাঁদের জন্য আইন দরকার ছিল।
অর্থনীতির বেহাল অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়া নির্মলা এবার সিএএ-র হয়ে স্ব্যাট করতে গিয়েও অস্বস্তিতে পড়লেন।