রাণা দাস,‌ কাটোয়া : কয়েক লক্ষ টাকার সরকারি গাড়ি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর মাসের পর মাস হাজার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে অফিস চলছে। এককথায়, যাকে বলা যায় সরকারি টাকার 'শ্রাদ্ধ' ! চালকের অভাবে নতুন গাড়ি পড়ে আছে জঙ্গলে, আর বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে মাসের-পর-মাস সরকারি কর্মীরা কাজে বেরোচ্ছেন। এমনই আজব ছবি ধরা পড়ল কাটোয়া ১ নম্বর আইসিডিএস অফিসে। 


কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত ও দুটি পুরসভার ২৮৯ টি কেন্দ্রে দেখভালের জন্য এই সরকারি জিপে প্রতিদিন সুপার ভাইজার সহ কর্মীদের যাতায়াত করতে হয়। কেন্দ্রগুলিতে চাল-ডাল পৌঁছাতে হয় এই গাড়িতে। সেই গাড়ি আজ চালকের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে।


কাজের সুবিধার্থে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে একটি নতুন জিপ কয়েক বছর আগে কাটোয়া ১ নম্বর আইসিডিএসের অফিসে দেওয়া হয়। সেই গাড়ি করেই চলছিল অফিসের সমস্ত কাজকর্ম। দু'বছর আগে গাড়ির চালক অবসর নেন। তার পর থেকে জঙ্গলে 'অবসর' নিচ্ছে ঝাঁ চকচকে গাড়িটি। চালক নেই, গাড়ি চলছে না। তাই বলে কি অফিসের কাজ বন্ধ থাকবে ! তাই বাইরে থেকে মাসের পর মাস হাজার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে দিব্যি কাজ চালাচ্ছেন কাটোয়া আইসিডিএস এর কর্মীরা। অফিসের এক কর্মী বলেন, এত টাকা খরচ করে মাসের পর মাস গাড়ি ভাড়া না নিয়ে একটা চালককে মাসিক চুক্তিতে নিলেই তো সরকারের হাজার হাজার টাকা বেঁচে যেত। আমরা নিচুতলার কর্মী। আমাদের কথা কি আর সাহেবরা শুনবেন ? তাঁদের বক্তব্য, জেলার আধিকারিকরাও জানেন যে নতুন গাড়ি পড়ে রয়েছে কাটোয়া অফিসে। তা সত্ত্বেও পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন কাটোয়ার দপ্তরের কাজের প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া করার নির্দেশ দিয়েছে। 


কাটোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইসিডিএস অফিসের সিডিপিও অরিন্দম রায় বলেন, গত দুবছর আগে সরকারি চালক অবসর নেওয়ার পর থেকে গাড়িটি চালকের অভাবে পড়ে আছে। গাড়ির অভাবে কর্মীদের চরম অসুবিধার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে । তাই আপাতত গাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। চালকের অভাবে গাড়ি পড়ে নষ্ট হচ্ছে সে ঘটনার কথা কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের আর এক কর্মী বলেন, নিয়ম রক্ষার্থে অফিসের আধিকারিক বছরে কয়েকটি চিঠি দিয়েছেন গাড়ির চালক চেয়ে। আসলে চালক আসুক এটা অনেকেই চাইছেন না। কারণ চালক এলে সেই জিপে করে ঘুরতে হবে। আর এখন তো নতুন নতুন গাড়ি নিয়ে ঘোরা যাচ্ছে। 


আইসিডিএসের সুপারভাইজার ললিতা দাস বলেন, মহকুমা শাসককে ড্রাইভার নেই, গাড়ি পড়ে রয়েছে পুরো বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছেন। তবে কাটোয়ার মহকুমা শাসক প্রশান্ত রাজ শুক্লা জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না। তবে সরকারি গাড়ি যদি এইভাবে দু'বছর ধরে পড়ে থাকে, আর তার জায়গায় গাড়ি ভাড়া করে চালানো হয় তাহলে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, খুব তাড়াতাড়ি একজন চালকের ব্যবস্থা করে ওই গাড়িটি চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।