সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: করোনা পরিস্থিতিতে রোজগার হারিয়ে চরম সঙ্কটে পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা। রেশন আর সরকারি ভাতায় কোনওমতে দিন কাটছে তাঁদের। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ছৌশিল্পীদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে। আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক।


দেখতে দেখতে এক বছরের বেশি সময় কেমন অতীত হয়ে গেল। জীবনকাল থেকে খসে পড়ছে এক একটা দিন। অথচ তাকেই তোলা রয়েছে জীবন ধারণের সরঞ্জাম। করোনার তাণ্ডবে স্তব্ধ উচ্ছ্বাস আর প্রাণশক্তিতে ভরা পুরুলিয়ার ছৌনাচ। ধামসার বোল, শিল্পীদের শারীরিক কসরৎ, তালে তালে ডিগবাজি- মারণ মহামারীতে সব বন্ধ। সুন্দরী পুরুলিয়ার পাহাড় জঙ্গলের লোকায়ত শিল্পী কবে ছন্দে ফিরবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।


এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ছৌ নাচের আসর। রোজগার হারিয়ে আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছেন ছৌ শিল্পীরা। ভরসা বলতে রেশনের চাল ডাল আর শিল্পী ভাতার এক হাজার টাকা। তা নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা। পুরুলিয়ার এক  ছৌশিল্পী বলেন, এক বছরের বেশি হয়ে গেল বসে আছি আমরা। কাজকর্ম নেই। আমরা কী করব? জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বনটুকু কেড়ে নিয়েছে করোনা। আরেক ছৌশিল্পীর কথায়, সরকারের এক হাজার টাকা ভাতা। এতে পোষায় না, এতে কী হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। নাম, টাকা দুটোই হোত। আমরা ছৌনাচ ছাড়া আর কিছু শিখিনি। এর ওপরেই সংসার নির্ভর করে।


সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন মেলা, উৎসব, অনুষ্ঠানে প্রায়ই ডাক পেতেন শিল্পীরা।  কিন্তু সর্বনাশা করোনার দাপটে উৎসব, মেলা এখন সবই বন্ধ। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ছৌ শিল্পীদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে। এমনই আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন শিল্পীরা সমস্যায় রয়েছেন। লকডাউন উঠলে, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ছৌশিল্পীদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে।


দারিদ্রের মধ্যেও সীমাহীন সারল্যকে সঙ্গী করে রুখাশুখা এলাকায় নাচগানের অশেষ প্রবাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এই সব শিল্পীরা। করোনার আঁধার ছিঁড়ে বেরিয়ে আবার আলোয় ভরা মঞ্চে নামতে চান তাঁরা।