নয়াদিল্লি: সমস্ত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে আমেরিকায় ফের জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন তিনি। আমেরিকার নির্বাচনে 'সুইং স্টেট' হিসেবে পরিচিত সাতটি অঙ্গরাজ্যেউ জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন কমলা হ্যারিস। সেই নিয়ে ট্রাম্প সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হলেও, দেশের মহিলাদের একাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন। শারীরিক সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে, সন্তান সবেতে 'না' বলার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। (US 4B Movement)
প্রথম এমন আন্দোলনের জন্ম হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেদেশের ভাষায় কোনও কিছুতে 'না' বলতে হলে, সংক্ষেপে 'B' বলা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের স্লোগান হয়ে ওঠে '4B', অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে এবং সন্তানধারণে না বলার অধিকার। রক্ষণশীল, পিতৃতান্ত্রিক রাজনীতিতে পুরুষদের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে '4B'. (Donald Trump Victory)
ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় '4B'-র পক্ষে সওয়াল শুরু করেন অনেকে। এর নেপথ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল গর্ভপাত নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান। আমেরিকার একাধিক অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ রয়েছে। সার্বিক ভাবে দেশে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পক্ষে এ বছরের গোড়ায় সমর্থন জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রচার পর্বে যদি জানান, গর্ভপাত নিয়ে অঙ্গরাজ্যগুলির উপরই নিজ নিজ আইন ঠিক করার দায়িত্ব ছাড়বেন তিনি।
পাশাপাশি, নারী বিদ্বেষী মন্তব্য, ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। গুরুতর অপরাধ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। সেই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য দেশের পুরুষ জনসংখ্যার দিকে আঙুল তুলছেন অনেকেই। মহিলাদের স্বার্থের কথা না ভেবে যখন ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন পুরুষরা, তাই তাঁদের বয়কট করার ডাক দিয়েছেন অনেকেই। আর তাতেই '4B'-কে তাঁদের সহায় হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের কথায়, "পুরুষরা শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চাইবেন, আবার আমাদের গর্ভপাতের অধিকারের বিপক্ষেও যাবেন! একসঙ্গে দু'টো পাওয়া যাবে না। মহিলাদের অধিকারের জন্য যাঁরা লড়াই করেন না, যাঁরা আণাদের সম্মান করেন না, আমরাও তাঁদের ঘনিষ্ঠ হব না।" সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেও অনেকে এই আন্দোলনে নাম লিখিয়েছেন।
প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে পুরুষদের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করার এই পন্থা মোটেই আধুনিক যুগের আবিষ্কার নয়। প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যেও এর উল্লেখ রয়েছে। যুদ্ধের বিরোধিতা করতে গিয়ে মহিলারা সঙ্গীকে সংসর্গ থেকে বঞ্চিত করছেন, এমন উদাহরণ পাওয়া যায়। নারীর অধিকার, নারী-পুরুষ সমানাধিকারের দাবিতে সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণ কোরিয়ায় '4B' আন্দোলনের সূচনা ঘটে। এবার আমেরিকাতেও তার সূচনা ঘটল। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকায় নারী এবং পুরুষের ভাবনায় আকাশ-পাতাল ফারাক দেখা দিয়েছে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি সমবয়সি পুরুষদের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি স্বাধীনচেতা, উদার। ২০১৮ সালে #MeToo আন্দোলনের সময় থেকেই এই ফারাক স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে জানা যায়।