নয়াদিল্লি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এনআরসি) বিরুদ্ধে গত সোমবার প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়ায় আইআইটি মাদ্রাজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এক জার্মান পড়ুয়াকে সম্প্রতি ‘অবিলম্বে’ দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এবার কেরলের কোচিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হওয়ায় অবিলম্বে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ নরওয়েজাত মহিলা পর্যটককে।
৭৪ বছরের মহিলা জেন-মেটে জোহানসন ১৭ ডিসেম্বর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কোচি আসেন। তাঁর ফেসবুক পোস্টে প্রকাশ, গত ২৩ ডিসেম্বর কোচিতে সিএএ-র প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত এক পদযাত্রায় যোগ দেন জোহানসন। এই প্রাক্তন নার্স বৃহস্পতিবার পোস্টে লেখেন, কয়েক ঘন্টা আগে অভিবাসন ব্যুরোর লোকজন ফের আমার হোটেলে আসেন। আমায় তক্ষুনি ভারত ছাড়তে বলা হয়, নইলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আমি এর ব্যাখ্যা চাই, লিখিত ভাবে জানাতে বলি। কিন্তু আমায় বলে দেওয়া হয়, লিখিত কোনও বক্তব্যই দেওয়া হবে না। ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট অফিসার বিমানের টিকিট দেখানো পর্য়ন্ত তাঁকে যেতে দিতে চাইছিলেন না বলেও দাবি করেন জোহানসন। জানান, খুব দ্রুত বিমানবন্দরের রাস্তা ধরব। এক বন্ধু দুবাইয়ের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওখান থেকে সুইডেন ফেরার বিমান ধরব।
ভারত ছাড়ার নোটিস পাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে জোহানসন বলেন, এখানে ওখানে সর্বত্র আমার যত বন্ধুবান্ধব আছেন, সবাইকে বলছি, সুন্দর ভারতবর্ষে ঘোরার সময় আর কিছু পোস্ট করব না। সবাইকে আমার যাত্রাপথে খেয়াল রাখার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি। কিন্তু এটা একান্ত হওয়ার সময়।


ভারতে বিদেশি নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন, থাকা, ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে যে সংস্থা, সেই ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) কোচির কর্তা অনুপ কৃষ্ণান বলেছেন, জেন-মেটে জোহানসনকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম ভাঙায় ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এটা মেনে চলতে সম্মত হন। তাঁকে সরাসরি দেশ ছাড়ার নির্দেশের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। আজ চলে যাচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জোহানসনকে তলব করে সিএএ-বিরোধী অনুষ্ঠানে থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি জেরায় একথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছে যে, তিনি কোচির এক স্থানীয় থানায় গিয়ে ওই মিছিলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন এবং তারা মৌখিকভাবে তাঁকে সম্মতি দেয়। পরে স্থানীয় এক সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, জেরা পর্ব সত্যিই প্রচুর সময় খেয়ে নিয়েছে, ব্যাপারটা তুচ্ছ।
২০২০র মার্চ পর্যন্ত তাঁর ভিসার মেয়াদ আছে বলে জানিয়েছেন ২০১৪ থেকে নিয়মিত ভারতে আসাযাওয়া করা জোহানসেন।
গত সোমবার জোহানসন যে বিক্ষোভ মিছিলে যান, তাতে সামিল হন বহু লেখক, চলচ্চিত্র দুনিয়ার লোকজন, মানবাধিকার কর্মীরা। পরে মিছিলের একটি ছবি পোস্ট করে জোহানসন লেখেন, সুসংগঠিত, শান্তিপূর্ণ মিছিল। কোনও অশান্তি হয়নি। লোকজন ছিলেন শপথে অবিচল, প্রতিবাদে সরব। পুলিশও সহযোগিতা করেছে। বড়দিনের সকালে কোচির এক গির্জায় সমবেত প্রার্থনায়ও যান জোহানসন।