এলাহাবাদ: 'হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর মৃত্যু গণহত্যারই সমান।' উত্তরপ্রদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সময় মতো হাসপাতালে অক্সিজেন না সরবরাহ করাকে কার্যত অপরাধেরই সামিল বলে জানায় হাইকোর্ট। 


কোভিড পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের সঙ্কটে কার্যত স্ত্রস্ত গোটা দেশ। তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। রাজ্যে অক্সিজেন সঙ্কটের বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় হাইকোর্টে। 


বিচারপতি অজিত কুমার ও বিচারপতি সিদ্ধার্থ বর্মার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এদিন বলে, 'কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের ভার যাদের উপর রয়েছে তাঁরাই অক্সিজেন সঙ্কট তৈরি করছে। তাঁদের এই কার্যকলাপে রোগীমৃত্যু গণহত্যারই সামিল।'


সম্প্রতি লখনউ এবং মেরঠের হাসপাতালে রোগী মৃত্যু নিয়েও মন্তব্য করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। গত রবিবার মেরঠে মেডিক্যাল কলেজের ট্রমা বিভাগে অক্সিজেনের সঙ্কটের আইসিইউতেই ৫ জন রোগী মারা গিয়েছেন। অক্সিজেনের অভাবে মেরঠের আরও এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিই নেওয়া হয়নি রোগীদের। লখনউয়ের একটি ঘটনাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।  


অথচ সরকার বলেছে অক্সিজেনের কোথাও ঘাটতি নেই। এ দিন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সোশ্য়াল মিডিয়ার ঘুরতে থাকা খবরগুলো দ্রুত খতিয়ে দেখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্য়ে মেরঠ ও লখনউ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রিপোর্টও চেয়েছে হাইকোর্ট।


হাইকোর্টের মন্তব্য,  'বিজ্ঞান যখন এত উন্নত, যখন হার্ট প্রতিস্থাপন, মস্তিষ্কের অপারেশনও এত সহজভাবে হচ্ছে, এরকম সময় স্রেফ অক্সিজেনের অভাবে কীভাবে সাধারণ মানুষকে মরতে দিতে পারি আমরা?'


অক্সিজেন মজুত করে 'কৃত্রিম' সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিছু ক্ষেত্রে বেনিয়মের ছবিও উঠে এসেছে। অক্সিজেনের কালোবাজারিরও খবরও প্রকাশ্যে এসেছে। এই সমস্ত ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়েছে আদালত।


প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বারবার দাবি করেছেন, রাজ্যের কোনও হাসপাতালেই বেড বা অক্সিজেনের সঙ্কট নেই। যদিও বাস্তব চিত্রটা একেবারেই অন্য। অক্সিজেনের অভাবে রোজই রোগীমৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসছে। 


একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েও জানিয়ে দিয়েছে, অক্সিজেনের অভাবে তাঁরা রোগীদের ভর্তি নিতে পারবে না। সবমিলিয়ে সঙ্কট চরমে। এদিকে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। হিসাব বলছে, উত্তরপ্রদেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ লক্ষ ছুঁইছুঁই।