নয়াদিল্লি: বিচ্ছিন্নতাকামী নেতার মৃত্যু ঘিরে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চরমে। কানাডায় সন্ত্রাসবাদী, মাফিয়ারা নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ ভারতের। তবে শুধুমাত্র ভারতে পুলিশের খাতায় নাম থাকা লোকজনই নন, কানাডায় নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন পড়শি দেশের কুখ্যাত লোকজনও। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নুর চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibur Rahman) হত্যাকারী নুর (India-Canada Relations)। তিনিও কানাডায় নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের তরফে বার বার অনুরোধ জানানো হলেও, আজও নুরকে ঢাকায় প্রত্যর্পণ করেনি কানাডার সরকার। (Canada-Bangladesh)


বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, মুক্তি আন্দোলনের পথপ্রদর্শক মুজিবুর ১৯৭৫ সালে খুন হন। দেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটলে, মেশিনগান থেকে পর পর গুলি ছুড়ে হত্যা হয় তাঁকে। এর পর বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন নুর। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনার সরকার বার বার নুরকে ফিরিয়ে দিতে আবেদন জানায় কানাডার কাছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাতে উচ্চবাচ্য করেনি ওট্টাওয়া। 


১৯৯৮ সালেই ঢাকার একটি আদালত নুরকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায়। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭০-এর ঘরে। এখনও পর্যন্ত কানাজায় শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাননি তিনি। বরং বার বার আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট নুর এবং মুজিব এবং তাঁর পরিবারের হত্যায় যুক্ত আরও ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখে। ২০১০ সালে তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও, নুর আজও অধরা রয়ে গিয়েছেন। 


আরও পড়ুন: Ram Temple: রামনবমীতে কপালে পড়বে নরম রোদ, অযোধ্যায় ‘রামলাল্লা’র প্রাণপ্রতিষ্ঠায় থাকবেন মোদি


বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে আতুবিকোকে রয়েছেন নুর। বার বার বাংলাদেশের তরফে আবেদন জানানো হলেও, কানাডা সরকার তা কানে তোলেনি। বরং জানানো হয় যে, কানাডার প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, অন্য দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের বিধি নেই। ২০১১ সালে কানাডার সরকারি রেডিও চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানেও হাজির হন নুর। জানান, তিনি নিরপরাধ। রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করতেই তাঁকে হাতে পেতে চাইছে বাংলাদেশ সরকার। 



মুজিব-হত্যার ৪৮তম বছরে, এ বছর বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন বাংলাদেশের আইন এবং বিচারব্যবস্থা মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, মুজিবের হত্যাকারী নুর চৌধুরী এবং রশিদ চৌধুরী, দু'জনেই অপরাধ স্বীকার করেছেন। কানাডায় নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন নুর। রশিদ রয়েছেন আমেরিকায়। আনিসুল বলেন, "মুজিব-হত্যার মূলচক্রী মেজর শরিফুল হক ডালিমের কোনও হদিশ না থাকলেও, কর্নেল রশিদ চৌধুরী আমেরিকা এবং নুর চৌধুরী কানাডায় রয়েছেন বলে জানি আমরা। সেনা অভ্যুত্থানের মূলচক্রী ছিলেন নুর,বঙ্গবন্ধুর হত্যাতেও জড়িত ছিলেন। তিনি কানাডায় রয়েছেন। আমেরিকার সঙ্গেও কথা চলছে।"


আনিসুল আরও বলেন, "দেশের পিতাকে হত্যা করা হয়, তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে খুন করা হয়। এত বড় অপরাধের নিরিখে কানাডার কাছে বার বার অনুরোধ জানিয়েছে নুরকে ফেরাতে। নিজে অপরাধ স্বীকারও করেছেন ওঁরা। অপরাধ নিয়ে আর কোনও প্রমাণ চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।" যদিও তার পরও নুরকে ফেরানো যায়নি আজও। একই ভাবে, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী আশরফউজ্জামান খান, চৌধুরী মুইনউদ্দিনের মতো ঘোষিত অপরাধীরা আজও কানাডা, ব্রিটেন এবং আমেরিকার মতো দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। ব্রিটেনের সঙ্গে সেই নিয়ে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়াও চলছে বাংলাদেশ সরকারের। দু'বছর আগে বাংলাদেশ সেনার প্রাক্তন ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।


১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুজিবের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া এবং সেনা শাসন কায়েমের ষড়যন্ত্র রচনা হয় বাংলাদেশে। ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগাস্ট দিনটিকে সেই লক্ষ্যে বেছে নেওয়া হয়। চারটি দলে বিভক্ত হয়ে ভোরে ঢাকায় প্রবেশ করেন বিদ্রোহী সৈনিকরা। বাড়িতে ঢুকে মুজিবকে হত্যা করা হয়। তাঁর পরিবারের সদস্য, গৃহসহায়িকা, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাকেও নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।  শুধু বিদেশে থাকায় রক্ষা পান মুজিব-কন্যা হাসিনা এবং শেখ রেহানা।  


এর পর, বিদ্রোহীরা প্রথমে রেডিও স্টেশনের দখল নেন। তার পর একে একে সরকারি ভবন, দফতর সব তাঁদের দখলে চলে যায়। নিরাপত্তা বাহিনাও অস্ত্র সমর্পণ করে দেয়। আওয়ামি লিগের নেতা তথা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, আরও এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলি, প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামানকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে জেলে হত্যাও করা হয় তাঁদের। আজও ১৫ অগাস্ট দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় শোকদিবস হিসেবে পালিত হয়।