নয়াদিল্লি :  আদানি ( Adani ) শিল্পগোষ্ঠী সম্পর্কে, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট নিয়ে, চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে। এই রিপোর্ট সামনে আসার পর ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে। আদানি ইস্যুতে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে বিজেপি সরকার। সংসদে বাজেট অধিবেশনের আদ্যন্তই উত্তপ্ত থেকেছে আদানি ইস্যু ( Adani-Hindenburg row ) নিয়ে।  এই ইস্যু নিয়ে এবার একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ( Union Home Minister Amit Shah )। 


শাহ স্পষ্টতই জানালেন, 'বিজেপি ( BJP )  আদানি ইস্যুতে কোনও কিছু লুকোচ্ছে না, ভয়ও পাচ্ছে না। বিরোধীদের যদি এতই অভিযোগ থাকে, আদালতে যান না। ' আদানি ইস্যুতে প্রথমবার মুখ খুলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি আরও বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি দেখছে।  একজন মন্ত্রী হিসেবে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কিন্তু এতে, বিজেপির লুকানোর কিছু নেই এবং ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।"


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার একান্ত সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, আদানি-হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করা তার পক্ষে উপযুক্ত হবে না। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, '
বিরোধীদের যদি এতই অভিযোগ থাকে, আদালতে যান না'। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আদানি-হিন্ডেনবার্গ বিতর্কে দেশের অর্থনীতির হাল খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ মেনে কমিটি গঠনে রাজি মোদি সরকার। সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্র জানিয়েছে, শেয়ার বাজারের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য কমিটি তৈরিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে বিদেশি বিনিয়োগ যাতে প্রভাবিত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেন্দ্র এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দিতে পারে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। 

এর আগে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা LIC ও SBI-র আদানির শেয়ারে লগ্নি নিয়েও আশঙ্কা দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়। আদানি সঙ্কটের জেরে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

আরও পড়ুন :


 রক্তাক্ত ভূস্বর্গ, ছিন্নভিন্ন জওয়ানদের দেহ, মৃত্যুমিছিল, ৪ বছর আগে ঠিক কী ঘটেছিল পুলওয়ামায়?



২৪ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিস্ফোরক রিপোর্ট! রিপোর্টে শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের মারাত্মক অভিযোগ করা হয়! যার জেরে কেঁপে যায় দেশের রাজনীতি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি, সংসদে দাঁড়িয়ে সপ্তমে সুর চড়ান স্বয়ং রাহুল গাঁধী। একেবারে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ' প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গৌতম আদানির কী সম্পর্ক? কীভাবে সব ব্যবসায় সফল গৌতম আদানি? কেন তাঁকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে? ' । রাহুল আরও বলেন, ' নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আদানিদের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু। একজনই কাঁধে কাঁধ রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশে দাঁড়িয়েছেন। উনি মোদির অনুগত থেকেছেন।' রাহুল বিজেপির আক্রমণের মুখেও থামেননি! কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই আদানি গোষ্ঠী কীভাবে বিমানবন্দরের ব্য়বসায় এল? চাঁচাছোলা প্রশ্ন ছুড়ে দেন মোদি সরকারের দিকে। যা করতে গিয়ে তিনি ব্য়বহার করেন হাইজ্য়াকের মতো কড়া শব্দবন্ধও!


এর সংসদে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। বারবার তোলেন ইউপিএ আমলে দুর্নীতির অভিযোগের কথা। কিন্তু আদানি প্রসঙ্গে একটি কথাও বলেননি। সেই একই পথে হেঁটে দুর্নীতি ইস্যুতে কংগ্রেসকে বেঁধেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কংগ্রেস আমলে ১২ লক্ষ কোটির টাকার দুর্নীতি হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাই তখন এই তথ্য দিয়েছিল'। 


এছাড়াও ত্রিপুরা নির্বাচন নিয়েও মুখ খোলেন অমিত শাহ। তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ত্রিপুরাতে জয় পাবে বিজেপিই। তিনি আরও বলেন,  'রাজস্থান, কর্ণাটক, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশে জিতবে বিজেপি' । সেই সঙ্গে তাঁর মুখে শোনা গেল এক দেশ এক ভোটের বিষয়েও। তিনি বলেন, ' আলাপ-আলোচনা চলছে, বছরজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে ভোট হচ্ছে, এটা ঠিক নয়'।  সামনে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা ভোট হলেও পাখির চোখ ২০২৪। আগামী লোকসভা নির্বাচনেও  মোদিজীকেই জেতাবে জনতা, প্রত্যয়ী শাহ।