কলকাতা : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। পুলওয়ামা জঙ্গি হানা ( 2019 Pulwama attack ) ) ভালবাসার দিনে ভূস্বর্গকে ( Kashmir ) রক্তাক্ত করল পাকিস্তানি ( Pakistan ) জঙ্গিরা। উরির ( Uri ) চেয়েও ভয়াবহ জঙ্গি হানা। কাশ্মীরের বুকে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হানা। ছিন্নভিন্ন হল ভারতের বীর জওয়ানদের দেহ। ভয়াবহ সেই দিন। আজও যন্ত্রণা দেয় সেই রক্তাক্ত হামলা। লাল গোলাপের ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার দিনে রক্তাক্ত হল ভূস্বর্গ। ৪ বছর পার করেও দগদগে সেই ঘা।
৪০ থেকে ৫০টি গাড়িতে ৩টি ব্যাটালিয়নের অন্তত আড়াই হাজার জওয়ান যাচ্ছিলেন সেদিন। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় জম্মু থেকে শ্রীনগর ( Srinagar ) যাওয়ার জাতীয় সড়কে ওঁত পেতে ছিল সন্ত্রাসবাদীরা! জওয়ানদের কনভয় যখন জাতীয় সড়ক ধরে শ্রীনগরে যাচ্ছিল, সেই সময় কাকাপোরা-লেলহর লিঙ্ক রোড দিয়ে ঢুকে পড়ে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি। ডানদিক দিয়ে যাচ্ছিল কনভয়....বাঁ দিকে ছিল বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি । তারপর আইইডি বোঝাই গাড়িটি নিয়ে জঙ্গিরা সোজা ধাক্কা মারে ৫৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানদের বাসে। বিকট আওয়াজে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তারপরই শুরু হয় কনভয় লক্ষ্য করে অবিরাম গ্রেনেড ও গুলিবৃষ্টি। ৪০ জন বীরযোদ্ধাকে হারাল দেশ । শহিদ হন ২ বাঙালিও। হামলার দায় স্বীকার করে নেয় জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। তার আগের দিনই পুলওয়ামার স্কুলে বিস্ফোরণে আহত হয়েছিল ১০ ছাত্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের জঙ্গি হামলা হয় ভূস্বর্গে।
স্বাধীন ভারতের কাশ্মীরে এর চেয়ে বড় হামলা আগে হয়নি। ভালবাসার দিনে জওয়ানদের রক্তে ভিজল ভূস্বর্গের মাটি। যাঁরা পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা ফিরলেন কফিনবন্দী হয়ে । বীর যোদ্ধাদের শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গাঁধী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনরা। আর এই ছবি দেখে দেশবাসীর চোখ ভাসল জলে, ফুটল রক্ত। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কাশ্মীরের বুকে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলায় ৪০ জন CRPF জওয়ান শহিদ হলেন ।
এরপর স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী শিবির থেকে প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেওয়া যাবে? কীভাবে জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের মতো স্পর্শকাতর রাস্তা, যা সবসময় নিরাপত্তার চাদরে মোড়া থাকে, সেখানে এত বড় জঙ্গি হানা ঘটাতে সক্ষম হল জঙ্গিরা? প্রায় আড়াইশো কিলো বিস্ফোরক নিয়ে জঙ্গিরা ওতপেতে বসে থাকল, অথচ কী করে গোয়েন্দারা ঘুণাক্ষরে টের পর্যন্ত পেল না? একসঙ্গে সিআরপিএফের এতগুলো গাড়ি প্রায় আড়াই হাজার জওয়ানদের নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে ওই সময় যাবে, এই গোপন খবর জঙ্গিদের কে দিল?
গোয়েন্দা সূত্রে সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দাবি ছিল, পুলওয়ামা হামলার ছক কষা হয় ৬ মাস আগে। পাকিস্তানে জঈশ-ই-মহম্মদের সদর দফতরেই তৈরি হয় ব্লু প্রিন্ট। মাষ্টারমাইন্ড সেই মাসুদ আজহার! হামলার ছক কষার পর চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেছিল জঈশ জঙ্গি নেতারা। সূত্রের দাবি ছিল, একবছর ধরে আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কাশ্মীরি আদিল আহমেদ দারকে। হামলার ৫ দিন আগে, ৯ ফেব্রুয়ারি আদিল ফিরে আসে ভারতে। দক্ষিণ কাশ্মীরে আশ্রয় নেয় সে। বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আদিলকে জঙ্গিনেতারা নির্দেশ দিয়েছিল, এমন ঘটনা ঘটাতে হবে যাতে একসঙ্গে অনেক জওয়ানের মৃত্যু নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু, হামলা হবে কোথায়? অনেক ভেবে জঙ্গিনেতারা ঠিক করে, দক্ষিণ কাশ্মীরে জঈশের প্রভাব বেশি। তাই সেখানেই নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলা চালানো হবে। আর সেই নীল নকশা মেনেই ভয়ঙ্কর সেই জঙ্গিহানা হয়।
পুলওয়ামায় হামলার ১২ দিন পর আকাশপথে প্রত্যাঘাত হানে ভারত। ২১ মিনিটের নিখুঁত অপারেশন। ১৯৭১-এর পর প্রথমবার পাকিস্তানে ঢুকে পাকিস্তানকে জবাব দেয় নয়াদিল্লি। জইশ-ই -মহম্মদের কন্ট্রোল রুম উড়িয়ে দেয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ যুদ্ধবিমান। প্রায় সাড়ে তিনশো জঙ্গির মৃত্যু হয় বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সেই প্রত্যাঘাতের পরই শুকায়নি পুলওয়ামার ঘা। আজও শূন্য সেই সব মায়ের কোল। ভালবাসার দিনে আজও সুখী নয় সেইসব গৃহকোণ।