গুয়াহাটি: জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ২৪-ঘণ্টা আগে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাঁর আশ্বাস, প্রকৃত ভারতীয়রা তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে যাতে সবরকম সহযোগিতা পান, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তাঁর সরকার। এমনকী, গরিবদের আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে।
তিনি জানান, শনিবার প্রকাশ হতে চলা চূড়ান্ত তালিকা থেকে কোনওভাবে যদি কারও নাম বাদ চলে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি যে বিদেশি হয়ে যাবেন, তার কোনও মানে নেই। কারণ, একমাত্র যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয় ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল (এফটি)। তিনি বলেন, কারও চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। সরকার সকলের খেয়াল রাখছে। যাঁদের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়বে, তাঁরাও নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন।
গত বছরের ৩০ জুলাই, যখন এই নাগরিকপঞ্জীর খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেই সময় বাদ পড়েছিল প্রায় ৪০.৭ লক্ষ মানুষের নাম। যা নিয়ে জোর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। খসড়ায় ৩.২৯ কোটি মানুষের মধ্যে ২.৯ কোটি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। গতমাসেও একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। সেখানেও প্রায় লাখ খানেক মানুষের নাম বাদ পড়ে।
সোনোয়াল বলেন, এনআরসি থেকে বাদ পড়া মানেই তিনি বিদেশি নন। একমাত্র ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের এক্তিয়ার রয়েছে কাউকে বিদেশি ঘোষণা করার। এমনকী, এফটি-ও যদি কোনও ব্যক্তিকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাইকোর্ট এমনকী সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করতে পারেন। তিনি আশ্বাস দেন, এই আইনি লড়াইয়ে গরিব মানুষদের আইনি সহায়তা প্রদান করবে রাজ্য সরকার। তিনি যোগ করেন, এফটি-তে আবেদনের ঊর্ধ্বসীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করেছে কেন্দ্র। ফলত, আমি সকলকে আবেদন করছি, শান্তিপূর্ণভাবে যাতে এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়, তার জন্য আন্তরিক সহযোগিতা করুন।
শনিবার এই তালিকা প্রকাশের সময় বা তার পর যাতে রাজ্যে শান্তি বিঘ্নিত না হয় এবং শান্তি বজায় থাকে, তার জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আশ্বাস দেন সোনোয়াল। রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণে আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রত্যেক জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে অত্যন্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চলা এনআরসি প্রক্রিয়া বর্তমানে একমাত্র অসমেই হচ্ছে। মূলত, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতেই এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এর আগে, ১৯৫১ সালে প্রথমবার অসমে এনআরসি করা হয়েছিল। সেই সময় রাজ্যে ৮০ লক্ষ বাসিন্দা ছিলেন। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী, তা বেড়ে ৩.১১ কোটি হয়েছে।