‘পুজোর ছুটি’। শব্দ দুটো বাঙালির জীবনে অনন্তবিস্তৃত মরুভূমিতে এক টুকরো মরুদ্যানের মতোই শোনায়। গোটা বছরের ইঁদুর দৌড়ের রসদ সংগ্রহ করতে বাঙালি প্রতিবছর ঠিক করে ফেলে পছন্দের ডেস্টিনেশন। কিন্তু হামেশাই বাদ সাধে গোনাগুনতি ছুটি। তাই বাঙালিকে প্রায়শই আপোষ করে বেছে নিতে হয় পাহাড়। না হয় সমুদ্র। কিন্তু ছোট্ট ছুটিতে চোখের সামনে পাহাড়কে রেখে দু’পা হাঁটলেই যদি সমুদ্রে পৌঁছে যেতে চান, তাহলে এবারের পুজোয় আপনার গন্তব্য হতেই পারে বালাসোর।





পূর্বঘাট পর্বতমালার গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে বালাসোরের রাস্তা। দর্শনীয় বলতে ছোট বড় মন্দির আর সবুজে ঢাকা পাহাড়। স্থানীয় মানুষদের মতে, সবচেয়ে জাগ্রত হল পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির। পাথর কাটা সিঁড়িকে বাঁকে বাঁকে পেঁচিয়ে রয়েছে পাহাড়ি ঝরনা। একেবারে ওপরে উঠে রয়েছে মন্দির আর ঝরনার জলের তলায় শিবলিঙ্গ। সবুজ পাহাড় আর চাষের জমিতে ঘেরা এই জায়গা ক্লান্তির অব্যর্থ ওষুধ। এছাড়াও কাছাকাছি রয়েছে বিশ্বেশ্বর মন্দির, ক্ষীরচূড়া মন্দির ও জগন্নাথ মন্দির, কালো ড্যাম, খুমকূট ড্যাম আর ওয়াচ টাওয়ার।





ছুটিটাকে আর দু-একদিন লম্বা করে নিয়ে ঘোরার তালিকায় জুড়ে নিতেই পারেন কুলডিহা অভয়ারণ্য, সিমলিপাল, দেবকুন্ড ঝরনা। সিমলিপালের সবুজ নিভৃত অরন্য যেমন শিহরণ জাগাবে, তেমনই মুগ্ধ করবে দেবকুন্ডে পাহাড়ের বুকের খরস্রোতা ঝরনা।





বাঙালির ভ্রমণে একটু সমুদ্রের ছোঁয়া থাকবে না তাই হয় নাকি? বালাসোর ভ্রমণ থেকে সময় বার করে একটা রাত যদি চাঁদিপুরে কাটিয়ে উঠতে পারেন তাহলেই ছুটির ষোলোকলা পূর্ণ। শোনা যায়, চাঁদের আলোয় সমুদ্রের জল অপূর্ব সুন্দর দেখায় বলেই নাকি জায়গার নামকরণ চাঁদিপুর। সকালবেলা চাঁদিপুরের প্রায় শুকনো সমুদ্রের বুকে হেঁটে যাওয়ার সময় মনেই হয় না রাতে এইখানেই ফুলে ফেঁপে উঠবে সমুদ্রের ঢেউ।



ফেরার পথে বালাসোরের বিখ্যাত মিষ্টি চেখে দেখা কিন্তু বাধ্যতামূলক। সব মিলিয়ে বড়জোর দিন পাঁচেকের ছুটিতেই অন্তত পাঁচ মাসের মন ভালো করার রসদ জোগাবে বালাসোর।





কীভাবে যাবেন- হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বরগামী প্রায় সব ট্রেনই বালাসোর ছুঁয়ে যায়। সকাল সকাল পৌঁছতে চাইলে টিকিট কাটতে পারেন ধৌলি বা ফলকনামা এক্সপ্রেসে। বালাসোর স্টেশন থেকে গাড়ি করে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর যেতে এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগে। এর আশেপাশেই রয়েছে বাকি মন্দিরগুলি। গাড়ি করে ঘুরে ফেলা যায় একদিনেই। কুলডিহা, সিমলিপাল, দেবকুণ্ড ঘুরতে অবশ্য অন্তত দু’দিন লাগবে।

কোথায় থাকবেন- বালাসোর স্টেশনের আশেপাশে কিছু হোটেল রয়েছে। নিরিবিলিতে থাকতে হলে বেছে নিতে পারেন পঞ্চলিঙ্গেশ্বর বা দেবকুণ্ডের কাছাকাছি যে কোনও রিসর্ট। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে থাকতে চাইলে এই জায়গা আদর্শ। পঞ্চলিঙ্গেশ্বরে সরকারি রিসর্ট ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি রিসর্ট।

আনুমানিক খরচ- দিন তিনেকের থাকা-খাওয়া খরচ মাথাপিছু ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। রিসর্টে বললেই গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যায় সাধারণত। খরচ ২ হাজার মতো। পাথরের জিনিসের শখ না থাকলে অন্তত বালাসোরে শপিং খরচা বেঁচে যাবে পুরোটাই।