বালেশ্বর: গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ। শুক্রবার রাতের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের প্রাণ। একদিকে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রেন। আরেক দিকে সাদা কাপড়ে মোড়া মৃতদেহের সারি(Odisha Train Accident)। শনিবার পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে মতবিরোধ হতে দেখা গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। মৃতের পরিসংখ্যান নিয়ে দ্বিমত দেখা গেল দু'জনের মধ্যে। উদ্ধারকার্য নিয়েও উঠল প্রশ্ন। ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র ছিল না বলে রেলমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই গাফিলতির অভিযোগ তুললেন মমতা (Coromandel Express Accident)। 


বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২৬১। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৫০ জন। এর মধ্যে বাংলার প্রচুর যাত্রী রয়েছেন। তাতে ওড়িশা পৌঁছে গিয়েছেন মমতাও। একসময় দীর্ঘদিন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এ দিন সরাসরি রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা, সামনে যখন খোদ রেলমন্ত্রী বৈষ্ণো দাঁড়িয়ে। মৃতের সংখ্যা নিয়ে দু'জনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মমতা বলেন, "আমি তো শুনছি, তিনটে কামরায় এখনও উদ্ধারকার্য সম্পন্ন করা যায়নি। সব মিটলে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।" তাতেই মাঝপথে রেলমন্ত্রী বলে ওঠেন, "না, উদ্ধারকার্য সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে ২৩৮ জন মারা গিয়েছেন। ওড়িশা সরকারের পরিসংখ্যান তাই বলছে।" এতে মমতা পাল্টা বলেন, "কাল পর্যন্ত ২৩৮ ছিল। তার পর কত হল?"



মমতার প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী জানান, ২৩৮ জনের পরিসংখ্যানই রয়েছে সরকারের কাছে। তাতে মমতা বলেন, "সেটা তো সরকারি ভাবে বলছেন! আমি তো জানি, তিনটি কামরায় এখনও ঢোকাই যায়নি। কোনও সমস্যা নেই, যা বাকি রয়েছে, আমরা একযোগে করে নেব। আসলে রেলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আগে আট মন্ত্রীর পরিষদ ছিল। এখন রেলের বাজেটই হয় না। আমি রেলের কাজ করেছি। রেল আমার কাছে সন্তানসম। তাই আমার পরামর্শ চাইলে, সবসময় প্রস্তুত।"



দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র ছিল না বলে এ দিন দাবি করেন মমতা। বলেন, "আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র (Anti Collison Device) তৈরি করেছিলাম। গোয়ায় গিয়ে সব ব্যবস্থা হয়েছিল। তার পর থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছিল। এটি এমন একটি যন্ত্র, যা ট্রেনে বসানো থাকলে, এক লাইনে যদি দু'টি ট্রেন এসে পড়ে, বা সামনে কিছু পড়ে থাকে, আপনা থেকেই থেমে যাবে ট্রেন। কিছু গড়বড় দেখলে সতর্কবার্তা যাবে।"


রেলমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা বলেন, "আপনি বিষয়টি দেখুন। আমার কাছে খবর আছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র ছিল না। যা ঘটে গিয়েছে, ঘটে গিয়েছে। এতগুলি প্রাণ তো আর ফিরবে না! কিছু বলার ভাষা নেই। কিন্তু এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু আছে। ভাল করে সবদিক খতিয়ে দেখতে হবে। এতগুলি মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে।" করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলা থকে বহু মানুষ ছিলেন। তবে হতাহতের মধ্য়ে বাংলা থেকে কত জন রয়েছেন, এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।