ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ বিশ্বাস, তুহিন কর্মকার , বালেশ্বর : বালেশ্বরের হাসপাতালে এখন শুধুই হাহাকার। স্বজনহারাদের কান্নার আওয়াজ হাসপাতাল চত্বরজুড়ে। সোরো হাসপাতালে রাখা বহু মৃতদেহ এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পরিবারের লোকজন। 


এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার ! এত মৃত্যু, এত হাহাকার, এত যন্ত্রণার হিসেব মেলানো যাচ্ছে না কিছুতেই। বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালের ছবিটাই বদলে গিয়েছে শুক্রবার থেকে। হাসপাতালের যেদিকে চোখ যায় শুধু হা হুতাশ, স্বজনহারার হাহাকার
এদিক-ওদিক থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল । যাঁরা কোনওমতে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের কারও হাত ভাঙা, কারও বা পা, হাসপাতালের মেঝেতেই রাখা সারি সারি মৃতদেহ। বেশিরভাগই এরাজ্যের বাসিন্দা।


ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে গড়বেতার বাসিন্দা প্রশান্ত সরকারের। গড়বেতার একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন প্রশান্ত। জামাইবাবুর চিকিৎসা করাতে তাঁকে নিয়ে কটক যান। চিকিৎসা করিয়ে সেখান থেকেই ফিরছিলেন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে। অসুস্থ জামাইবাবু বেঁচে ফিরলেও, শেষ রক্ষা হয়নি প্রশান্ত সরকারের।


গতকাল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সোজা সোরো হাসপাতালে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। দেখা করেন আহতদের সঙ্গে।

ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ওড়িশার রাজ্যপাল গণেশি লাল। শনিবার ভোরে বালেশ্বরের হাসপাতালে যান সুকান্ত মজুমদারও। সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'নিজেদের ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বন্দে ভারত, বন্দে ভারত করে লাফাচ্ছেন। কিন্তু রেলের পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি করছেন না। এটাকে আমি বলতে পারি, পরিকল্পিত গণহত্য়া।'

সোরো হাসপাতালে রাখা বহু মৃতদেহ এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পরিবারের লোকজন। স্বজন নেই, আছে শুধু হাহাকার। এই আর্তনাদের শেষ কোথায় ? উত্তর খুঁজছে দেশ।


প্রসঙ্গ, বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৮৮ জন বলে দাবি রেলের। আহত হাজারের বেশি। দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার করা হচ্ছে মৃতদেহ। হাহাকার স্বজন হারানোর। এদিকে করমণ্ডল বিপর্যয়ে মৃত্যুমিছিলে কান্নার রোল বাংলাতেও। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৩১জন। আহত ৫৪৪। এমনই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, এত বড় বিপর্যয় ঘটল কীভাবে ? রেলের দাবি, সিগনাল বিভ্রাটেই বালেশ্বর বিপর্যয়। কেন কাজ করল না অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস 'কবচ'? কীভাবে ৩ ট্রেনের সংঘর্ষ ? দায় কার? উঠছে প্রশ্ন। তিন দশকের মধ্যে সব থেকে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে এটাকে। গতকাল দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী-রেলমন্ত্রীরা। কার গাফিলতিতে বিপর্যয়? তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।