অরিত্রিক ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বালেশ্বর : ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যুমিছিল ! যার ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। যান্ত্রিক ত্রুটি না কারও গাফিলতির জেরে প্রাণ হারালেন ২৮৮ জন ? এবিপি আনন্দের বিশেষ প্রতিবেদন।
ভয়ঙ্কর ! বীভৎস ! মারাত্মক ! করমণ্ডল এক্সপ্রেস...নাকি কফিন এক্সপ্রেস ? জনপ্রিয় এই ট্রেনের এমন পরিণতিতে, কোনও বিশেষণই হয়তো যথেষ্ট নয় ! কিন্তু, কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা ? সেটা বুঝতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে, কোন ট্র্যাক দিয়ে কোন ট্রেন যাচ্ছিল।
রেল সূত্রে খবর, বাহানাগা বাজার স্টেশনের অদূরে মোট ৫টি ট্র্যাকে ছিল ৪টি ট্রেন। প্রথম লাইন বরাবরের মতো অব্যবহৃত অবস্থাতেই ছিল। করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে জায়গা দিতে, তিন নম্বর ট্র্যাক থেকে মালগাড়িকে ২ নম্বর ট্র্যাকে অর্থাৎ লুপ লাইনে ঢোকানো হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাওয়ার কথা ছিল তৃতীয় লাইন ধরেই। রেল সূত্রে মনে করা হচ্ছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে কোনওভাবে লুপ লাইনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি গিয়ে ধাক্কা মারে মালগাড়ির পিছনে। ওই সময়েই চতুর্থ লাইন ধরে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। আর ৫ নম্বর ট্র্যাকে ছিল দ্বিতীয় মালগাড়ি।
সংঘর্ষের অভিঘাতে করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওপর। করমণ্ডলের পিছনের কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে চতুর্থ লাইনে ছিটকে পড়ে ! মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, দেশলাই বাক্সের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে কামরাগুলি!
কিন্তু, কীভাবে একই ট্র্যাকে ঢুকে পড়ল দুটি ট্রেন ? সিগন্যালিং ব্যবস্থার সমস্যার কারণেই জেরেই কি ট্র্যাক বদলাতে পারেনি করমণ্ডল এক্সপ্রেস ? না কি চালকের গাফিলতি ? যদি তা নাও হয়, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল কী করে ? রেল সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার আগে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার। দুর্ঘটনার মুহূর্তে মাত্র ২৩ সেকেন্ডে করমণ্ডল গতিশূন্য হয়ে পড়ে! সেই সময় ৪ নম্বর ট্র্যাক দিয়ে আসছিল হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২৬ কিলোমিটার। ধীরে ধীরে তার গতিবেগ কমতে থাকে।
সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে রেল যেমন উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করবে, তেমনই কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি স্বাধীনভাবে এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজবে বলে সূত্রের খবর। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, "উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পাশাপাশি, রেলওয়ে সেফটি কমিশনারও তদন্ত করবে। এই মুহূর্তে উদ্ধারকাজকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।"
আরও একটা ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা। এত মানুষের মৃত্যুমিছিল ! ফের প্রশ্নের মুখে রেলের সুরক্ষা ! প্রতিবার দুর্ঘটনার পরে তদন্ত হয়। রিপোর্ট জমা পড়ে। কিন্তু, ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না কেন ? সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।