নয়াদিল্লি: নয় নয় করে গত ন'বছরে একাধিক বার 'এক দেশ, এক নির্বাচনে'র দাবি তুলেছে বিজেপি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে জেরবার কেন্দ্র, সেই আবহে ওই নীতি কার্যকর হতে চলেছে বলে আরও একবার জোর পেল জল্পনা। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটের বৈঠক চলাকালীনই, সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সেখানেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন' বিল পাস করানো হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। (One Nation One Election)


বিগত কয়েক বছরে একাধিক বার 'এক দেশ, এক নির্বাচনে'র জল্পনা উস্কে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। ওই নীতির আওতায়, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন  একসঙ্গে করানোর জোরাল দাবি উঠেছে, যাতে একবার নির্বাচন হয় এবং একবার ভোট দিয়েই মতামত জানাতে পারেন দেশের নাগরিকরা।  দেশের আইন কমিশনও বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখেছে ইতিমধ্যেই। সেপ্টেম্বরের পাঁচ দিনব্যাপী অধিবেশনে  ওই সংক্রান্ত বিল পাস করানো হতে পারে বলে এবার দিল্লি সূত্রে সামনে এল। (Parliament Special Session) 


খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নীতি কার্যকরের পক্ষে সওয়াল করেছেন একাধিক বার। যুক্তি দিয়েছেন, বার বার নির্বাচন করাতে গিয়ে উন্নয়নের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। লোকসভা, বিধানসভা এমনকি পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনও একসঙ্গে মিটিয়ে ফেলার পক্ষপাতী তিনি। ২০২০ সালে একটি সমাবেশে উপস্থিত হয়ে মোদি বলেন, "কয়েক মাস অন্তর, কোথাও না কোথাও নির্বাচন হয়ই। এতে উন্নয়বের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।  তাই এক দেশ, এক নির্বাচন নীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা প্রয়োজন।"


আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: কেন আদানিকে আড়াল করছেন মোদি, CBI-ED তদন্ত হবে না কেন, সুর চড়ালেন রাহুল


যদিও বিজেপি এবং মোদির এই সুপারিশের বিরোধিতা করে আসছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। 'এক দেশ, এক নির্বাচনে'র বিরোধিতায় যে যুক্তি উঠে আসে, তা হল, শুধু ঘোষণা হলেই হল না, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করতে হলে, বেশ কিছু সাংবিধানিক পরিবর্তনও ঘটাতে হবে। এর ফলে ভারতীয় সংবিধানে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো এবং আদর্শের উল্লেখ রয়েছে, তার পরিবর্তে দেশে একক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় শক্তির শাসন কায়েম হবে। তাতে ক্ষতি বই, লাভ নেই বলে মত সমালোচকদের। 


'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করার নেপথ্যে বিজেপি-র রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলেও মত বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, আজকাল নির্বাচন মোটামুটি প্রচার নির্ভর। যে দলের অর্থের জোর বেশি, প্রচারের ঢক্কানিনাদেও এগিয়ে থাকে তারাই। সেই নিরিখে যদি একবারে সব স্তরের নির্বাচন করানো হয়, তাহলে একবার টাকা ঢেলেই কার্যসিদ্ধি হওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে লোকসভার ঢেউয়ে ভেসে যেতে পারে বিধানসভাগুলি। টাকার বুলডোজারের নীচে বৈচিত্রের যাবতীয় সম্ভাবনাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে একটি দলই লাভবান হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে বিজেপি বিশেষ উদ্যোগী বলে মত বিরোধীদের। 


বিজেপি-র এই ভাবনায় বিপদ দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশও। তাঁদের মতে, স্থানীয় বিষয়ের নিরিখে স্থানীয় নির্বাচন এবং সামগ্রিক দেশ গঠন ভাবনার নিরিখে জাতীয় নির্বাচন, এই নীতি নিয়েই কেন্দ্র এবং রাজ্যস্তরের নির্বাচন আলাদা রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রের নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে গোটা দেশকে যেমন এক সুতোয় বেঁধে রাখার ভাবনা ছিল, তেমনই রাজ্য এবং গ্রামগুলিকে আঞ্চলিক পরিচিতি এবং নিজস্ব সত্তা ধরে রাখার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল। সেই উদার সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ভাবনা থেকে বেরিয়ে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন' কার্যকর করতে এত উদ্যোগ বলে মনে করছেন অনেকেই। 


উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বিরোধীদের একজোট হতে দেখে, লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আনা হতে পারে বলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছিলেন তাঁরা। তার পরই, মুম্বইয়ে বিরোধীদের বৈঠক চলাকালীন সংসদের পাঁচ দিন ব্যাপী বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার। সেখানেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন' বিল উত্থাপন করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছি দিল্লির রাজনৈতিক মহলে।