কলকাতা: ORS-এর জনক প্রয়াত দিলীপ মহলানবিশকে (Dilip Mahalanabis) মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মান (Padma Awards 2023) প্রদানের ঘোষণা। শিশুরোগ এবং ঔষধ বিভাগের জন্য এ বছর পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত তাঁকে। ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারের। গত বছর ১৬ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শিশুরোগ এবং ঔষধ বিভাগের জন্য এ বছর পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত
১৯৩৪ সালের ১২ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্ম দিলীপের, যা এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশুরোগ বিভাগে স্নাতক। ব্রিটেনে ন্য়াশনাল হেল্থ সার্ভিসের রূপায়িত হলে লন্ডন এবং এডিনবরা থেকেও ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্রিটেনে কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিলড্রেন-এর প্রথম ভারতীয় রেজিস্ট্রার ছিলেন। ছয়ের দশকে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (কলকাতা)-এ যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে আগত কাতারে কাতারে শরণার্থীকে জায়গা দিতে যখন হিমশিম অবস্থা, তাতে গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়ায় কলেরার প্রকোপ। ক্ষুধার্ত, দুর্বল শরণার্থীরা দলে দলে তার কবলে পড়েন। অল্প সময়ের মধ্যেই মহামারি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই সময় কলেরায় মৃত্যুর হার ছিল ৩০ শতাংশ।
সেই সময় শরণার্থী শিবিরগুলিতে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা এবং পরিস্থিতি পরিদর্শনের দায়িত্ব কাঁধে ওঠে দিলীপের। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত পর্যবন্ত দিনরাত এক করে, নিজের সহযোগীদের নিয়ে রোগীদের শুশ্রূষায় নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য রাতারাতি অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ইঞ্জেকশন এবং চিকিৎসা সরঞ্জামেরও জোগান ছিল না।
সেই সঙ্কটের সময় ওরাল হাইড্রেশনের উপরই জোর দেন মহলানবিশ। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সূচ ফোটানোর পরিবর্তে পানীয়ের আকারে স্য়ালাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই সময় লবণ-চিনি এবং বেকিং সোডার জলের মিশ্রণ তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন দিলীপ। একরকম ভাবে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃতি পায় ORS।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে আগত কাতারে কাতারে শরণার্থীকে জায়গা দিতে যখন হিমশিম অবস্থা, ORS নিয়ে আসেন দিলীপ
এর পর, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কলেরা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের হয়ে আফগানিস্তান, মিশর, ইয়েমেনেও কাজ করেন দিলীপ। আটের দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্দাতা হিসেবে ব্যাকটিরিয়া থেকে ঘটিত রোগ নিয়েও কাজ করেন। কিন্তু কৃতিত্বের যথাযোগ্য মর্যাদা পাননি তিনি, এমনটাই মনে করেন তাঁর আত্মীয়-পরিজন এবং গুণমুগ্ধরা।