নয়া দিল্লি: মশলার বাজারে চিরকালীনই জাফরান দামে-রূপে-গন্ধে নিজের আভিজাত্য বজায় রেখেছে। খাদ্যের ইতিহাস থেকে জানা যায় মিনোয়ান সভ্যতায় প্রথম জাফরানের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ব্রোঞ্জ যুগে গ্রিসের এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গড়ে ওঠে এই সভ্যতা। সেখানেই প্রথম জাফরানের ব্যবহার শুরু হয়। ইতিহাসের হাজার বছরের পথ পেরিয়ে সেই মসলা এখন সহজলভ্য পণ্য। তবে এটির বাজারমূল্যে এখনও চড়া। বিশ্বজুড়ে এই মসলা ‘লাল সোনা’ হিসেবে পরিচিত।
সেই জাফরানের দাম এবার রেকর্ড। নেপথ্যে ভারত-পাক অশান্ত আবহ। ইকোনমিকস টাইমস, বিজনেস টুডে-এর প্রতিবেদন অনুসারে, উচ্চমানের কাশ্মীরি জাফরানের দাম প্রতি কেজি ৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা সর্বোকালের রেকর্ড। রিপোর্ট অনুযায়ী, কাশ্মীরি জাফরানের দাম কিলো প্রতি ৫০,০০০ - ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে লাল রঙের এই মশলা ৫০ গ্রাম সোনার মতো দামি হয়ে উঠেছে।
জম্মু অঞ্চলের উচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত পুলওয়ামা, পাম্পোর, বুদগাম, শ্রীনগর এবং কিশতোয়ার-জুড়ে অবস্থিত জাফরান ক্ষেতগুলি থেকে বছরে মাত্র ৬ থেকে ৭ টন জাফরান উৎপাদিত হয়। এই ঘাটতি সাধারণত আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ভারতে বছরে প্রায় ৫৫ টন জাফরানের চাহিদা রয়েছে। সীমান্ত বন্ধের মাত্র চার দিনের মধ্যে, দাম ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
জাফরান তৈরি হয় ক্রোকাস ফুলের গর্ভমুণ্ড থেকে। ক্রোকাস ফুল মাত্র কয়েক দিনের জন্য ফোটে। এই ফুল সকালে তুলতে হয়। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর সাহায্যে খুব সতর্কতার সঙ্গে ফুলের গর্ভমুণ্ড সংগ্রহ করতে হয়, যেন এটা ভেঙে না যায়। এরপর গর্ভমুণ্ড রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এক কেজি জাফরান সংগ্রহ করতে প্রায় দেড় লাখ ফুল থেকে ২০ দিন ধরে গর্ভমুণ্ড সংগ্রহ করতে হয় বলে ইরানের সরকারি এই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। আর এক কেজি জাফরান তৈরিতে প্রায় ৩৭০ থেকে ৪৭০ ঘণ্টা সময় লাগে।ফুল থেকে থেকে জাফরান বের করতে বেশ দক্ষতার প্রয়োজন। এ কারণেই জাফরানের আকাশছোঁয়া দাম।
কিন্তু পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে স্থলপথে বাণিজ্য রুট বন্ধ হওয়ার ফলে আফগান চালান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে সরবরাহ-চাহিদার মধ্যে ফারাক দেখা দিয়েছে, হু হু করে বেড়েছে দাম।