সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা :  জঙ্গি হামলায় মৃত্যু উপত্যকা পহেলগাঁও। একদিনের মধ্যে বদলে গিয়েছে ছবিটা। পর্যটকদের হইহই , গাড়ি ধরার তাড়া, ট্যুরিস্ট গাইডদের তৎপরতা,শাল বিক্রেতাদের হাঁকডাক ...সব স্তব্ধ। ২০২৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে প্রাণবন্ত হতে শুরু করা কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের ছবিটা এক মুহূর্তে যারা দিল বদলে, তাদের স্কেচপ্রকাশ করেছে গোয়েন্দারা। দেখা গিয়েছে এই স্কেচে উঠে এসেছে যাদের মুখাবহআসিফ ফৌজি, সুলেমান শা এবং আবু তালহার । সূত্রের খবর, পর্যটকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল ৪ জঙ্গি।আরও ৩ জঙ্গি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল। এদের মধ্যে আদিল গুরুই ছিল মাথা ! এই ঘটনায় পাকিস্তানের হাত স্পষ্ট মনে করছেন গোয়েন্দারা। অনেকটা রাস্তা ট্রেক করে পাক জঙ্গিরা হামলাস্থলে এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল এত বড় একটা হামলার খবর কি গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না ? প্রশ্ন উঠছে এই ঘটনার পিছমে কি দায়ী গোয়েন্দা-ব্যর্থতাও? 

মাস্টারমাইন্ড আদিল গুরু কে ?

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড আদিল গুরু। এমনটাই মনে করছেন গোয়েন্দারা। বেশ কয়েকবছর আগে কাশ্মীরে ঢুকেছিল এই পাক জঙ্গি। এরপর ২০১৮-য় ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ফের পাকিস্তানে চলে যায় আদিল। সম্প্রতি ওই জঙ্গি ফের কাশ্মীরে এসেছিল। এই আদিলই পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করা হচ্ছে।  

হেলমেটে ক্যামেরা লাগানো ছিল

হামলাকারী জঙ্গিদের মধ্যে একজনের নাম ছিল আসিফ শেখ। আদিল ও আসিফের সঙ্গে দুই পাক জঙ্গিও ছিল। হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট TRF। সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে এও জানা গেছে, জঙ্গিদের হেলমেটে ক্যামেরা লাগানো ছিল। নিজেরাই ভিডিও করে মূলচক্রীদের পাঠাচ্ছিল হামলাকারীরা। ৩ জঙ্গির কাজ ছিল মহিলা-পুরুষদের আলাদা করে তাদের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত করা। তারপর তাদের বেছে বেছে খতম করা। 

হয়েছে স্নাইপার হামলাও

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পর্যটকদের ওপর স্নাইপার হামলাও হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, রীতিমতো রেকি করেই বৈসরণ উপত্যকাকে হামলাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা। যাতে উদ্ধারকাজে দেরি হয় এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ে।    

এখনও পর্যন্ত আক্রমণকারীদের কাউকেই ধরা যায়নি। পহেলগাঁও জুড়ে রয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। তবে সেনাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে পারে জঙ্গিরা। মনে করছে গোয়েন্দা সূত্র। 

এখন তড়িঘড়ি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে দলে দলে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।  জঙ্গি হানা প্রাণ কেড়েছে ২৬ জনের। ঘটনার পর গোটা এলাকা শুনশান। দোকানপাট বন্ধ। বৈসরণ যাওয়ার রাস্তা পুরো ফাঁকা। ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। পহেলগাঁওয়ের জঙ্গলে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, CRPF এবং জম্মু কাশ্মীর পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আকাশপথেও চলছে নজরদারি, উড়ছে চপার। গোটা কাশ্মীরজুড়েই চলছে চিরুনি তল্লাশি। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।