ইসলামাবাদ: একবার নয়, দু’-দু’বার দেশভাগের অভিজ্ঞতা রয়েছে পাকিস্তানের। দেশের ভূখণ্ডকে আবারও টুকরো করার কথা উঠল সেখানে। মন্ত্রী আব্দুল আলিম খান খোদ দেশের বিভিন্ন প্রদেশকে ছোট ছোট অংশে ভাঙার কথা বললেন। এতে শাসনকার্য চালানো এবং দেশের সর্বত্র পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ সহজ হবে বলে দাবি তাঁর। (Pakistan New Provinces)
১৯৪৭ সালে ভারতের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানও হাতছাড়া হয় পাকিস্তানের। তাই দেশের ভুখণ্ডকে টুকরো করার কথা উঠলেই পুরনো ক্ষত তাজা হয়ে ওঠে দেশবাসীর মনে। কিন্তু পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মন্ত্রী আব্দুল আমীন খান জানিয়েছেন, ছোট ছোট অঞ্চল ‘অবশ্যই তৈরি করা হবে’। (Pakistan News)
শেখুপুরায় ইস্তেকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে, প্রকাশ্য জনসভায় এই মন্তব্য করেন আব্দুল। তিনি জানান, বড় প্রদেশগুলিকে ভেঙে ছোট ছোট অঞ্চল তৈরি করা হবে। এতে শাসনকার্যের উন্নতি হবে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ মজবুত হবে এবং দ্রুত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে মানুষের কাছে।
আব্দুলের দাবি, বর্তমানে দেশের অন্দরে যে প্রাদেশিক সীমানা রয়েছে, তা আধুনিক সময়ের উপযোগী নয়। সিন্ধ এবং পঞ্জাবের মতো প্রত্যেকটি প্রদেশকে তিনটি ভাগে ভাঙা যাবে। খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানকেও ছোট ছোট অংশে ভেঙে ফেলার ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলির উদাহারণ টানেন আব্দুল। বলেন, “আমাদের চারপাশের দেশগুলিতে ছোট ছোট অনেক প্রদেশ রচেছে, যা দক্ষভাবে শাসনকার্য চালানোর কাজকে সহজ করে তোলে।” যদিও আব্দুলের এই প্রস্তাব পাকিস্তানে গৃহীত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পাকিস্তানের বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অন্যতম শরিক দল, পাকিস্তান পিপলস পার্টি বরাবরই নতুন অঞ্চল তৈরির বিরোধী। বিশেষ করে সিন্ধকে ভাঙতে দিতে নারাজ তারা। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ একাধিক বার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, সিন্ধের ঐক্য এবং সাংবিধানিক অধিকারের উপর কোনও রকম হস্তক্ষেুপ বরদাস্ত করা হবে না। গতমাসেও তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আল্লাহ্ ছাড়া সিন্ধকে ভাগ করার অধিকার কারও নেই।”
১৯৪৭ সালে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সময় সেখানে মোট পাঁচটি প্রদেশ ছিল, পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পঞ্জাব, সিন্ধ, উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার প্রদেশ এবং বালুচিস্তান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর পশ্চিম পঞ্জাব শুধুমাত্র পঞ্জাব প্রদেশে পরিণত হয়। উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার প্রদেশ হয় খাইবার পাখতুনখোয়া। সিন্ধ এবং বালুচিস্তানের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।
তাই হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন প্রদেশকে ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ করা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এতে বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় আরও তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আগেও পাকিস্তানকে ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ করার প্রস্তাব উঠেছে একাধিক বার। কিন্তু এবার বিভিন্ন মহল থেকে সমর্থনও জুটছে। সিন্ধের মুত্তাহিদা কুয়ামি মুভমেন্ট-পাকিস্তানও এই প্রস্তাবে রাজি। আইনি পথে ২৮তম সংশোধনের মাধ্যমে নতুন অঞ্চল তৈরির বিষয়টি দেখে তবে ছাড়বে বলে জানিয়েছে তারা।
যদিও এতে সরকারের বিপদ বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। দেশের আমলা সৈয়দ আখতার আলি শাহ ভেবেচিন্তে এগনোর পরামর্শ দিয়েছেনয তাঁর মতে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাই মূল সমস্যা। সবদিক বিবেচনা না করে বিভিন্ন প্রদেশের টুকরো করা হলে, তাতে অসাম্য বাড়তে পারে। পাকিস্তানের থিঙ্কট্যাঙ্ক Pildat-এর প্রেসিডেন্ট আহমেদ বিলাল মেহবুবের মতে, আগে যতবারই শাসনব্যবস্থায় সংস্কার করতে যাওয়া হয়েছে, তাতে ক্ষোভ বরং বেড়েছে। প্রদেশগুলিকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে ফেলা যেমন খরচসাপেক্ষ, তেমনই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং রাজনৈতিক ভাবে বিপজ্জনক বলে মত তাঁর।
স্বাধীনতার পর ভারতে একাধিক বার সীমানার পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। ১৯৬০ সালে তদানীন্তন বম্বে থেকে পৃথক দুই রাজ্য, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে হরিয়ানা থেকে আলাদা হয় পঞ্জাব। একই ভাবে পাকিস্তানে পৃথক দক্ষিণ পঞ্জাব প্রদেশ গঠনের দাবি তুলছে মুত্তাহিদা কুয়ামি মুভমেন্ট-পাকিস্তান। দক্ষিণ পঞ্জাবকে ভেঙে মুলতান ও বাহওয়ালপুরকে পৃথক রাজধানী শহর ঘোষণার দাবি তুলছে তারা। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৪টি প্রদেশ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের Geo TV.