পতঞ্জলির ৩০তম প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠিত হল হরিদ্বারে। উপস্থিত ছিলেন স্বামী রামদেব জি মহারাজ, পতঞ্জলি যোগপীঠের সভাপতি এবং আচার্য্য বালকৃষ্ণ, এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। হরিদ্বারে রয়েছে পতঞ্জলি ওয়েলনেস। সেখানকার যোগ ভবন অডিটোরিয়ামেই রয়েছে পতঞ্জলির এই প্রতিষ্ঠানের ৩০তম প্রতিষ্ঠা দিবসের উদযাপন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পতঞ্জলি যোগপীঠ সংগঠনের ৬০০০- এর বেশি আধিকারিক উপস্থিত হয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। তার উপস্থিতিতেই আগামী দিনের জন্য নতুন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন স্বামী রামদেব জি মহারাজ। ৩০ বছরের পরিষেবা দেওয়ার পদ্ধতি, সেই পথে আসা সংগ্রাম এবং অধ্যাবসায়ের কথা বলেছেন তিনি। এর পাশাপাশি আগামী দিনে পতঞ্জলি যোগপীঠ কী কী উদ্যোগ নিতে চলেছে সেই প্রসঙ্গেও আলোকপাত করেছেন। পতঞ্জলি যোগপীঠের যোগ বিপ্লবের সাফল্যের পর আরও ৫টি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন রামদেব মহারাজ। তিনি জানিয়েছেন, পতঞ্জলি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি রোগ, ভোগ, লজ্জা এবং হতাশা থেকে মুক্তির জন্য কাজ করবে। 


শিক্ষায় স্বাধীনতা 


রামদেবের কথায় বর্তমানে ৫০ থেকে ৯০, কোথাও বা ৯৯ শতাংশ শিক্ষিত মানুষ বেকার, নেশাসক্ত, চরিত্রহীন এবং নির্বোধ শিশু, যাদের শৈশব, যৌবন এবং আমাদের বংশ বিপদে রয়েছে। তাই পতঞ্জলি সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথমে ভারতে এবং তারপর সারা বিশ্বে একটি নতুন শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করা হবে। এই শিক্ষাব্যবস্থার নেতৃত্ব থাকবে ভারতের হাতে। পতঞ্জলি গুরুকুল, আচার্য্যকুলম, পতঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে। এর পাশাপাশি ভারতীয় শিক্ষা পর্ষদ নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে। লক্ষ্য হল আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতীয় শিক্ষা বোর্ডে ৫০০০০০ বিদ্যালয়কে যুক্ত করা হবে। শিক্ষার জগতে এটা নিঃসন্দেহে এক অভিনব বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। বাচ্চাদের পড়ানো হবে বেদ, উপনিষদ, দর্শন, পুরাণ। দেশের পাশাপাশি বিশ্বের সম্পর্কেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি সংস্কৃতও পড়ানো হবে। আধ্যাত্মিক বিষয়, সনাতন ধর্ম, দেশের গৌরব সংক্রান্ত সব খুঁটিনাটি বিষয় পড়ানো হবে বাচ্চাদের। 


স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবায় স্বাধীনতা 


আজকাল সিন্থেটিক ওষুধপত্র, স্টেরয়েড এবং পেনকিলারের প্রভাবে আমাদের শরীর ক্রমশ অসুস্থ হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে তৎপর পতঞ্জলি সংগঠন। তাদের তরফে জানানো হয়েছে পতঞ্জলি ওয়েলনেস, যোগগ্রাম, নিরাময়ম, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আধুনিক গবেষণার সাহায্যে মুনি-ঋষিদের মতামত এবং বিজ্ঞানকে একযোগে কাজে লাগানো সম্ভব হবে স্বাস্থ্যের উন্নতিতে। বিশ্বমানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে এর মধ্যেই ৫০০০- এর বেশি রিসার্চ প্রোটোকল এবং ৫০০ গবেষণা পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দুরারোগ্য বিভিন্ন অসুখের নিরাময়, সমাধানের কথা বলা হয়েছে। মানুষকে সুস্থ রাখা এবং যোগ ও আয়ুর্বেদের মাধ্যমে অসুখ সারানোই পতঞ্জলির অন্যতম মূল লক্ষ্য। 


অর্থনৈতিক স্বাধীনতা 


পুরো অর্থনীতি এখন নিষ্ঠুর মুষ্টিমেয় লোকের কুক্ষিগত। পতঞ্জলির লক্ষ্য হল সমৃদ্ধির জন্য পরিষেবা এবং সম্পদ প্রদান করা। এযাবৎ পতঞ্জলি সংগঠন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গবেষণা, চরিত্র গঠন এবং জাতির গঠনে এক লক্ষ কোটি টাকা দান করেছে। ১০ হাজারেরও বেশি কেন্দ্র, ২.৫ মিলিয়ন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যোগাসন প্রশিক্ষক এবং এক কোটি কর্মী নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা প্রদান করছে। লক্ষ্য একটাই, স্বদেশী আন্দোলনকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যাতে ভারতে অর্থনৈতিক শোষণ, দাসত্ব এবং দারিদ্র্যতার হাত থেকে মুক্তি পায়। রামদেব মহারাজের কথায় ব্লাড প্রেশার, থাইরয়েড, অ্যাজমা, আর্থ্রারাইটিস, স্ট্রেস, অবসাদ এইসব অসুখ দূর করে এবং ওষুধের খরচ কমিয়ে আমরা দেশের জন্য প্রতি বছর ৭০০ থেকে ২০০০ লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চয় করতে পারি।


বুদ্ধিমত্তা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও প্রয়োজন স্বাধীনতা 


আধ্যাত্মিক জগত সম্পর্কে বিশ্বকে সর্বপ্রথম বার্তা দিয়েছিল ভারতই। অথচ এখন সেই দেশই বুদ্ধিমত্তা এবং সংস্কৃতিক দাসত্ব সহ্য করছে। এটা চলতে পারে না। ভারত এখন এমন সব দেশের উপর নির্ভর করে যাদের কাছে কাগজের টাকা, ডলার, পাউন্ড ব্যাতীত কিছু নেই। আসল সম্পদ শুধুমাত্র এই টাকাপয়সা নয়। বরং সুস্বাস্থ্য, সুখী পরিবার, ভাল চরিত্র, আধ্যাত্মিক চেতনা এগুলিই আসল সম্পদ। তাই ভারতকে বুদ্ধিমত্তা এবং সাংস্কৃতিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি লক্ষ্য হল সনাতন ধর্ম, বৈদিক ধর্ম, ঋষি ধর্ম এবং যোগ ধর্মকে যুগের নতুন ধর্ম হিসেবে উন্নীত করা। বিশ্বে ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ যোগ ধর্ম এবং সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করেন। আমরা একযোগে চলতে পারলে ধর্মের নামে সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে যে সন্ত্রাস চলছে তা বন্ধ করতে পারব, এমনটাই বলেছেন রামদেব। 


আসক্তি, প্রবৃত্তি এবং রোগ থেকে মুক্তি 


সারা বিশ্বে আসক্তির এক অদ্ভুত খেলা চলহে। ভারতেও চিত্র একই। আসক্তির কারণে রোগের মাধ্যমে ধ্বংস হচ্ছে মানুষের। সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে নেশার প্রতি আসক্তি এবং অশ্লীলতা। পতঞ্জলি সংগঠনের লক্ষ্য হল রোগ, আসক্তি এবং খারাপ প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া। ৩০ বছর পথ চলার পরে, পতঞ্জলি বিশ্বকে যোগ-ভিত্তিক করার এবং চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আদর্শ বিশ্ব নাগরিক তৈরি করার সংকল্প নিয়েছে।