নয়াদিল্লি: নয় নয় করে একবছর হতে চলল যুদ্ধের। প্রাণ গিয়েছে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের, যার সিংহভাগ শিশু। ইজরায়েল বনাম হামাস যুদ্ধে এবার নয়া আতঙ্ক প্যালেস্তাইনের গাজায়। দীর্ঘ ২৫ বছর পর গাজায় ফিরল পোলিও। চলতি মাসের শুরুতে গাজায় এক বছরের শিশুর শরীরে পোলিও ধরা পড়েছে। শিশুটি একবছর পূর্ণ হয়নি এখনও। তার শরীরের কিছুটা অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। (Polio Returns to Gaza)


রহমান আবু আল-জিদিয়া নামের ওই শিশুর শরীরে পোলিও ধরা পড়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে তড়িঘড়ি পোলিও-র টিকাকরণের আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর  থেকে পোলিওর টিকাকরণ শুর হয়েছে সেখানে। এই টিকাকরণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে যুদ্ধবিরতের আবেদন জানানো হয়েছি। তাতে সাড়া দিয়ে তিন দিন যুদ্ধ বন্ধ রাখতে সম্মত হয় ইজরায়েল এবং হামাস। যদিও জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে হতাহতের খবরও মিলছে। (Israel-Hamas War)


এখনও পর্যন্ত যা খবর, রহমান নামের ওই শিশুর শরীরে পোলিও-র যে রূপ ধরা পড়েছে, সাম্প্রতিক কালে একাধিক উন্নত দেশেও ওই পোলিও-র সেই রূপের হদিশ মিলেছে।  গাজায় কীভাবে ওই সংক্রমণ ফিরল, এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে জেনেটিক সিকোয়েন্সে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মিশরে পোলিও-র যে রূপ ধরা পড়ে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে এটির। 



গাজা-সহ অধিকৃত প্যালেস্তাইনের সর্বত্র পোলিও-র টিকাকরণ শুরু করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। যে স্কুলগুলিতে টিকাকরম চলছে, তার তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO). ১০ বছর অনূর্ধ্ব বয়সি শিশুদের টিকাকরণ চলছে। আগে যাদের টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে, ফের তাদের টিকার এমার্জেন্সি ডোজ নিতে বলা হয়েছে। গাজার মানুষের উদ্দেশে WHO-র বার্তা, 'টিকাকরণ নিরাপদ এবং কোনও টাকা লাগবে না'।


২০২২ সালে গাজায় পোলিও টিকাকরণের হার ছিল ৯৯ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে সেই হার ৮৯ শতাংশে এসে ঠেকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, প্রায়শই ইজরায়েলি হানার জেরে গাজার অনেক হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের জল, বিদ্যুৎও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে টিকাকরণের হারেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও ইজরায়েলের দাবি, হামাস হাসপাতালগুলিকে নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। তাই তাদের কড়া পদক্ষেপ করতে হয়েছে। 


যদিও মানবাধিকার কর্মী এবং চিকিৎসাকর্মীদের দাবি, লাগাতার হামলার জেরে গাজার নর্দমাগুলি সব উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। বসতি এলাকাতেও গত ১১ মাসে আবর্জনার পাহাড় জমেছে। ইজরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে তার মধ্যেই ইতিউতি মাথা গুঁজেছেন সাধারণ প্যালেস্তিনীয়রা। এই পরিস্থিতিতে রবিবার থেকে তিন দিন টিকাকরণ চলবে। টিকাকরণের জন্য গাজায় পৌঁছেছেন ২ হাজার ৭০০ স্বাস্থ্যকর্মী। ঘুরে ঘুরে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দেবেন তাঁরা। WHO-র তরফে ৯৫ শতাংশ টিকাকরণএর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। 


গাজায় পোলিও-র এই প্রত্যাবর্তনে অশনি সঙ্কেত দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। কারণপোলিওর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত কয়েক দশকে অভাবনীয় সাফল্য মেলে। ১৯৮৮ সাল থেকে পোলিও প্রায় ৯৯ শতাংশ মুছ গিয়েছিল। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানেই এই মুহূর্তে পোলিওর বিপদ রয়েছে। সবমিলিয়ে ৩০টির মতো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে WHO, যার মধ্যে রয়েছে গাজার প্রতিবেশী মিশর এবং ইজরায়েলও।